‘ভারত-আমেরিকাকে ক্ষুব্ধ করতেই সংখ্যালঘুদের হত্যা’
মাসুদ আলম : ভারত, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশকে ‘ক্ষুব্ধ’ করতেই জঙ্গিরা বেছে বেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করছে। এসব হত্যার মাধ্যমে সরকারকে বিপদে ফেলতে চায় তারা। জঙ্গিদের ধারণা, হিন্দুদের হত্যা করলে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হবে ভারত। আর বৌদ্ধ-খ্রিস্টান খুন করলে আমেরিকা ও জাপান ক্ষুব্ধ হবে। আর এতে সরকার উৎখাত করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম তাদের জন্য সহজ হবে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
গত ১৫ জুন মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার খালেদ সাইফুল্লাহকে নিয়ে ডিএমপি এ সংবাদ সম্মেলন করে। সাইফুল্লাহ ওই শিক্ষক হত্যাচেষ্টার মূল পরিকল্পনাকারী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে দাবি পুলিশের। মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুর নাজিমুদ্দীন সরকারি কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল জেএমবির আমির। এরপর একটি স্ক্রিপার সেল সংগঠিত হয়ে তার ওপর হামলা চালায়। তবে স্থানীয়রা টের পেয়ে যাওয়ায় জঙ্গিরা সফল হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় রাজধানীর ডেমরার বাদশাহ সড়ক থেকে প্রভাষক রিপনের ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে জামিল ওরফে আফিফ কাইফি ওরফে পথভোলা পথিককে (২৬) গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট।
তিনি বলেন, প্রভাষক রিপন যে কলেজে শিক্ষকতা করেন সেই নাজিমুদ্দীন সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান বেলায়েত হোসেনের ছেলে গ্রেফতারকৃত সাইফুল্লাহ। ঘটনার অল্প কয়েকদিন আগে বেলায়েত হোসেন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যায় প্রভাষক রিপন। এসময় সাইফুল্লাহ তাকে টার্গেট করে। এরপর জেএমবির আমিরের কাছ থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে হত্যার অনুমতি নেয়। অনুমতি পাওয়ার পর সাইফুল্লাহ তার অনুসারী ফাহিমসহ আরও কয়েকজনকে এ হত্যার দায়িত্ব দেয়। ঘটনার সময় ফাহিমের মোবাইল নিয়ে সাইফুল্লাহ দূরেই দাঁড়িয়েছিল। রিপনেরও ওপর যখন হামলা করে তখন স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলে। তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ফাহিমকে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। অবস্থা বেগতিক দেখে ফাহিমের মোবাইল নিয়ে চলে যায় সাইফুল্লাহ। তিনি আরও বলেন, ‘সাইফুল্লাহ শুধু এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী না, অর্থদাতাও। মাদারীপুরের পুরান বাজার কামার পট্টি থেকে সে ২৭০০ টাকা দিয়ে দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি চাকু কেনে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহ এসব বিষয় স্বীকার করেছেন। সাইফুল্লাহ ৪৯ জন জেএমবি সদস্যের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা এই গ্রুপের বিষয় তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় জেএমবি। আপনারা জানেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে একটি রাজনৈতিক দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের সঙ্গে জেএমবির উদ্দেশ্যের মিল রয়েছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি