ঢাবির স্মরণিকায় প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়া ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি
তদন্ত কমিটি গঠন, ভিসির বাসভবনে তালা, গাড়ি ভাঙচুর ও বিক্ষোভ
মাসুদ আলম ও ফয়সাল খান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় রেজাউর রহমান তার লেখায় জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করার পর ছাত্রলীগের প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে অব্যাহতি দেয়। গতকাল শুক্রবার বিকালে রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে স্বাক্ষর করেন উপরেজিস্ট্রার মুন্সি শামসুদ্দীন আহমেদ।
জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি লেখার কারণে দুপুরে রেজাউর রহমানের কক্ষে তালা দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে রাতে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও ও তালা লাগিয়ে দেয়। এর আগে দুপুরে উপাচার্য গাড়ি নিয়ে বাসভবনে ঢুকতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। এ সময় উপাচার্য গাড়ির ভেতরেই ছিলেন। তবে তিনি অক্ষত আছেন। পরে রাতে আবার উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাস ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্মরণিকায় লেখাটি রেজাউর রহমানের নিজের লেখা। যেহেতু এটা ভারপ্রাপ্ত রেজাউর রহমানের ‘বাইলাইন লেখা’ তাই এর দায়-দায়িত্ব লেখককে বহন করতে হবে। এ কারণে রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য রেজাউর রহমান এই লেখাকে ‘ছাপার ভুল’ বলে সাংবাদিকদের কাছে উল্লেখ করেছেন।
শুক্রবার উপাচার্যের কার্যালয়ে নিযুক্ত উপ-রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ ম ম স আরেফিন সিদ্দিক অব্যাহতির এই আদেশ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ রেজাউর রহমানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে, বলা হয়েছে আদেশে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তথ্য বিকৃতি ঘটেছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুক্রবার একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে। এই স্মরণিকায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছর উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব রেজাউর রহমানের লেখা ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে নিবন্ধে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে তিনি লিখেছেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চলাকালে রেজাউরের লেখাটি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার দৃষ্টিতে আসে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে স্মরণিকা কমিটিও বাতিল ঘোষণা করেন। সভা শেষে দুপুর ১২টা থেকে পৌনে একটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে তার কার্যালয়ে তালাবন্দী করে রাখেন। স্মরণিকার কপিতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে রেজাউর রহমানকে তালামুক্ত করে বের করে নিয়ে যান। এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে কর্মীরা দুুপুর ২টার দিকে উপাচার্যের বাংলোর সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বিচার দাবি করেন।
বিকাল তিনটার দিকে বাসায় ঢোকার পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। এ সময় উপাচার্যের দেহরক্ষী আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করে বিফল হন। পরে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা রাতে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে ভিসিকে রাজাকার বলে সেøাগান দিতে থাকে। এসময় ভিসির বাসভবনে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভিসি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিলো।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় উপাচার্যের বাসভবনসহ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি