সস্তা শ্রমিক ও আউটসোর্সিং নিয়ে বিতর্কে ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোম্পানির নিজস্ব ব্র্যান্ডের শার্ট, টাই ও কাফের লেবেলে ‘মেড ইন চায়না’ দেখা হরহামেশাই মেলে। এইসব ব্র্যান্ডের অন্যান্য পোশাকও উৎপাদিত হয়ে থাকে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো থেকে। অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজের ব্র্যান্ডের সব পোশাকই তৈরি করে আনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দেশগুলো থেকে, যেসব দেশে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়। তার বিভিন্ন কোম্পানির অন্যান্য পণ্যেরও বড় একটি অংশই তৈরি করা হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকেই। অথচ তিনি নিজেই নিজের নির্বাচনি প্রচারণায় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। তার নির্বাচনি প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে মার্কিন জনগণের কর্মসংস্থানের প্রাধান্যকে। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণায় ঘোষিত নীতির সঙ্গে তার কোম্পানির এমন বহির্বিশ্ব থেকে পোশাক উৎপাদনের নীতি তাই উসকে দিয়েছে সমালোচনা। এ খবর দিয়েছে ব্রিটিশ অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
খবরে বলা হয়, ২০১১ সালে ট্রাম্প একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে চীন যেভাবে নিজেদের মুদ্রাকে রদবদল করে তাতে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা প্রায় অসম্ভব। তবে মঙ্গলবার আবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ট্যাক্স বসাবেন। এর মাধ্যমে তিনি আমেরিকায় কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনবেন। শুধু তাই নয়, যেসব মার্কিন কোম্পানি নিজেদের কর্মী বা কারখানা অন্য দেশে স্থাপন করবেন তাদেরও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবেন। অথচ নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, ট্রাম্প হোম ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদনের জন্য তুরস্কের বিলাসবহুল আসবাব উৎপাদনকারী ডোরিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে চুক্তিবদ্ধ হয় ট্রাম্পের কোম্পানি। আবার ট্রাম্পের কোম্পানির ক্রিস্টালের পণ্যগুলো উৎপাদিত হয়েছে সেøাভেনিয়ায়। এ ছাড়া নিউ ইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারসহ ট্রাম্পের তিনটি প্রধান ভবনের নির্মাণ কাজে বাইরের দেশ থেকে অভিবাসী শ্রমিক এনে ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের অনেকেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। তবে ট্রাম্পের দাবি, তিনি জানতেন না যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমন অবৈধ উপায়ে শ্রমিকদের নিয়োগ করেছে। ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো রিসোর্টেও রোমানিয়া ও অন্য দেশ থেকে আনা শ্রমিক ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভরা মৌসুমে স্থানীয় এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ ও যোগ্য শ্রমিক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এটা তাই স্পষ্ট যে, নিজের নির্বাচনি প্রচারণায় সবসময়ই আউটসোর্সিং বা বাইরের দেশের শ্রম ব্যবহারে ট্রাম্পের তীব্র আপত্তির কথা শোনা গেলেও ট্রাম্পের নিজের কোম্পানিগুলোতে এর চর্চা হরহামেশাই হয়ে থাকে। ২০০৫ সালে ট্রাম্প তার ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি ব্লগে লিখেছিলেন, ‘যদি কোনো কোম্পানির টিকে থাকার একমাত্র উপায় হয়ে থাকে বাইরের দেশে কর্মসংস্থানের ওপর নির্ভর হওয়া, সেটা কখনও কখনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে।’ আবার ২০১২ সালে তিনি একটি চ্যাট শো-এর উপস্থাপক ডেভিড লেটারম্যানকে বলেছিলেন, তার ট্রাম্প ব্র্যান্ডের শার্ট উৎপাদন করতে গিয়ে বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগ করতে পেরে তিনি গর্বিত। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা ভালো। আমরা বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগ করি। তাদেরও তো কাজ করতে হবে।’ নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারে এমন সব পদক্ষেপের সঙ্গে তার নির্বাচনি প্রচারণার বক্তব্য বিপরীতমুখীই বটে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ