রক্তাক্ত ঢাকা কী সিগন্যাল দিল?
প্রণব সাহা
অবশেষে ঢাকাকে রক্তাক্ত করল জঙ্গি সন্ত্রাসীরা। সারাবিশ্বের চোখ এখন ঢাকার দিকে। একটি উৎকণ্ঠার রাত কাটানোর পর সবাই জানতে পারল ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এর আগেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন জঙ্গিদের গুলি এবং তাদের ছোড়া গ্রেনেড বা বোমায়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি কমান্ডো দল শনিবার সকালে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ নামের অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে সামর্থ্য হয়েছে। দেশের প্রথমবারের মতো এমন একটি ঘটনা নিঃসন্দেহে নতুন করে ভাবতে শেখাবে আমাদের।
পুলিশ র্যাবের সঙ্গে সেনা এবং নৌবাহিনীর প্যারাট্রুপাররা যোগ দিয়েছিল অভিযানে। জঙ্গিসহ ২৮ জনের মৃত্যুর পর আমাদের ওপর কি এই চাপই বাড়বে যেদেশে আইএস নামের আন্তর্জাতিক জঙ্গিরা সক্রিয় আছে। আইএস দাবি করেছে রাতেই, যে তাদের সদস্যরা ২৯ জনকে হত্যা করেছে। এখন আমরা কোনদিকে এগোব। এখনও কি আইএস-এর অস্তিত্ব অস্বীকার করা হবে, নাকি জঘণ্য এই তৎপরতা দেশবাসী সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করবে। সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলা করার জন্য নতুন প্রস্তুতি নিতে হবে। এর আগে দেশের ৬০ জেলায় একই সময় বোমাহামলা চালিয়ে বিচারকসহ অন্যদের হত্যার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এরপর আমরা জঙ্গি বাংলাভাইসহ বেশকিছু জঙ্গিগোষ্ঠীকে নির্মূল করার কৃতিত্ব আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এবারও দুজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ দিলেন দায়িত্বপালন করতে গিয়ে। মাত্র ১৩ মিনিটের অপারেশন থান্ডারবোল্ডের সাফল্য আমাদের সাহস যোগাবে। কিন্তু যদি সত্যিই আইএস তাদের বীজবপণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হবার কোনো কারণ নেই। ভাবতে হবে তাদের প্রতিরোধ করার কথা। আর যদি স্থানীয় উগ্রবাদীরাই ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করতে সচেষ্ট হয়, তবে তা নিয়ে তো নতুন করেই ভাবতে হবে সবাইকে। বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে না দেখে জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখেই এগোতে হবে। শুক্রবারের জঙ্গিহামলা এবং ২২ জনের প্রাণহানিকে বিবেচনায় নিতে হবে। আর জঙ্গিদের মধ্যে শুধুমাত্র আটক হয়েছে একজন। তার অর্থ অন্যরা মরার জন্যই প্রস্তুত ছিল। তারা কিন্তু দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে কোনো দাবি-দাওয়া জানায়নি। একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর পেছনে মোটিভটি কি সেটা কিন্ত স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করতেই পারি, আটক হওয়া এক জঙ্গিকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দাসংস্থাগুলো সচেষ্ট হবে এর শিকড় খুঁজে বের করতে। আপাতত সেই অপেক্ষায় না থেকে কিইবা বলার আছে। শেষে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা যে তারা নিজের জীবন দিয়ে দেখিয়ে গেলেন দায়িত্বটাই বড়। এতে পুলিশবাহিনীর মনোবল দুর্বল হবে না, বরং তারাও নিজেদের দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্যই কাজ করে যাবেন।
লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন