গুলশান ট্র্যাজিডি, রক্তধোয়া এ কোন বাংলাদেশ?
অজয় দাশগুপ্ত
এমন কঠিন দিন, এমন কঠোর রাত বাংলাদেশ আগে কখনও দেখেনি। দেশটি যখন স্বাধীন হয় কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি, এই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে একদিন এমন কোনো অপারেশন চালাতে হতে পারে। এই ঘটনা সব কিন্তু কেন যদির অবসান ঘটিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আর রাখঢাক বা মিথ্যের কোনো সুযোগ নেই। দুনিয়ার বহুদেশের সঙ্গে বিশেষত আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে এককাতারে দাঁড় করিয়ে দেওয়া আজকের সকাল দেশ ও মানুষকে এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে, এর থেকে বের হতে না পারলে ভবিষ্যৎ বলে কিছুই থাকবে না।
গোড়াতেই আমাদের পুলিশ ও সামরিকবাহিনীকে স্যালুট জানাই। মনোবল ভেঙে দেওয়ার মতো কাজ করার পরও তারাই জিতেছেন। তারা এদেশ ও জনগণকে ভালো না বাসলে এমন ঝুঁকি নিতেন না। তাদের এই জীবনদান ও বীরত্ব একদিন সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠবে। তবে আজ আমরা নতজানু। আজ আমাদের চোখ, মন, শরীরজুড়ে একধরনের অপরাধবোধ।
রাজনীতি কবে থেকে কেবলই অস্বীকার করে আসছে। তার ভয় সত্য বললে যদি আমেরিকারা ঘাড়ে চেপে বসে? সে ভয় আমরাও পাই। কারণ দেশে দেশে শান্তি কায়েমের নামে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা হতে দিলে মাটি ছাড়া কিছুই থাকবে না। অন্যদিকে সরকার যত ওরা নেই ওরা নেই বলেছে ততই তারা আগ্রাসী হয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছে আমরা আছি। গুলশান তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
ভাবতে হবে, কখন কেন কোন কারণে এমন বদলে গেল এই দেশ। একি কেবল ফাঁসির দায়ভার? না এর সঙ্গে আছে গভীর ষড়যন্ত্র? এই উপমহাদেশের নানা দেশে এমনটি ঘটলেও আমরা তাতে পা দিইনি। আমাদের সংস্কৃতি, রুচি, পোশাক সব মিলিয়ে এমন হিংস্র হবার কথা নয়। এখন তা বাতিল হয়ে গেছে। রাজনীতির মদদ বদলে যাওয়া বিশ্বাস আর কথায় কথায় পশ্চিমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর দায় এখন যুদ্ধ চাইছে। অথচ এখনও আমরা বলছি না আমরা কবেই বদলে গেছি। কবে আমাদের বদলে দিয়েছে বেহেশত-দোজখ আর মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানি রাজনীতি। দেশ, জাতি, মানুষ তুচ্ছ হয়ে বড় হয়ে উঠেছে অন্ধ বিশ্বাস।
এটা বিচ্ছিন্ন বা অপরিকল্পিত কিছু ছিল না। এতদিন ধরে বিচারহীন টুকরো টুকরো ঘটনার মাত্র একরিল দেখলাম আমরা। অবাক হয়েছি মিডিয়ার আচরণে। টিভির বালক-বালিকারা ভেবেছে উৎসব। কি জঘণ্য। নিয়মনীতি এমনকি জীবন অনিরাপদ করে জিম্মির নাম বলে দেওয়ার নাম সাংবাদিকতা? এই উৎপাত নিয়ন্ত্রণের দরকার এখন। ওগুলো বলে দেখিয়ে কোনো ঘোড়ার ডিমের লাভ নেই। বরং চাই সততা আর নিরাপত্তার কঠিন বলয়। মিডিয়া নালায়েক নাবালক হলে বিপদ আরও বাড়বে।
ঠিক এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল সিডনিতে। মাত্র একজন বন্দুকধারী সারারাত বিনিদ্র রেখেছিল আমাদের। সে তুলনায় আমাদের বাহিনী অনেক ভালো করেছে। তবে সেই ক্যাফেটি ও তার আশপাশ মানুষ ভরিয়ে দিয়েছিল ফুলে। দুশমনকে জানিয়েছিল কাকে বলে ভালোবাসা আর কাকে বলে ঘৃণা।
ঠিক এই জিনিসটা চাই। ঐক্য, ভালোবাসা আর দেশপ্রেম। কিন্তু ঘটনা ঘটার পরপরই খালেদা জিয়া চান তার নিরাপত্তা। কি রাজনীতি আর কি তার চাওয়া?
বাংলাদেশ তোমাকে এখন নিজ থেকে জাগতে হবে। রক্তে জীবনের নতুন ফুল না ফুটলে কেউ ভালো থাকবে না। আজ যে শিশু বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করল তার জীবনকে এমন রক্তাক্ত করার দায় নেবে কে? রাষ্ট্র, সরকার না জঙ্গিবাদ?
আমরা এর অবসান চাই।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন