জয়িতা আয়েশা এখন তিনটি বুটিক কারখানার মালিক
জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর : ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ প্রবাদ বাক্যটি নিজের জীবনে যেমন বাস্তবায়ন করেছে তেমনি অন্যের জীবনের ভাগ্যটা বদলানের চেষ্টা করে যাচ্ছে রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের মেয়ে আয়েশা বেগম। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের সফলতায় নকশীতে লক্ষ্মীপুর এখন দেশের ব্যান্ডিং। শুধু ব্যান্ডিংই নয় সাথে তিনি সৃষ্টি করেছেন ৫শ নারীর কর্মসংস্থান।
সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে শুরু করেন ছোট একটি বুটিক কারখানা। পরে দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের গৃহবধূ আয়েশা বেগম তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অদম্য মনোবলের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা লাভের পর বুটিকের তিনটি কারখানা দিয়ে ভাগ্য বদলে করে এখন এলাকার কোটিপতির মধ্যে তিনিও একজন।
বাবার দারিদ্র্যেতার কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হলেই বন্ধ হয়ে যায় আয়েশার শিক্ষাজীবন। তবে এতে তিনি দমে যাননি। সাহস ও ইচ্ছাশক্তি থাকলেই যে কোনো কাজ যে কারো পক্ষেই করা সম্ভব। তাই বিয়ের পাঁচ বছর পর আবারও লেখাপড়া শুরু করে বিএ পাস করেন তিনি। এর মাঝে অন্যর একটি দোকানে বুটিকের কাজের মাধ্যমে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অদম্য মনোবলে দেখিয়ে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থনীতি সাফল্য অর্জনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পান আয়েশা বেগম। পরে সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নিজের ঘরে গড়ে তোলা ছোট বুটিকের আয় দিয়ে গ্রামে বড় করে একটি কারখানা গড়ে তোলেন। ঘুরে যায় তার জীবনের গতি।
বতর্মানে তার নিজ বাড়ি ও জেলার দালাল বাজার এলাকাসহ তিনটি কারখানায় রয়েছে আয়েশা বেগমের। এতে স্থানীয় প্রায় ৫‘শ নারীর কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই এলাকার এখন অনেক নারী সংসারের পাশাপাশি আয়েশার বুটিকে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কামানখোলার বাবুর বাড়িতে ঘিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে চলছে শাড়ীতে বুটিকের কাজ। সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলারা ও লেখা-পড়ার পাশা-পাশি স্কুল পড়–য়া মেয়েরা শাড়ীতে বুটিকের কাজ করে বাড়তি টাকা রোজগার করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। বর্তমানে আয়েশার নিজের উদ্বেগে ৫শতাদিক মহিলা সাবলম্বী হতে চলছে।
সারা বছর বুটিকে কাজ হলেও ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা বেশি থাকায় তার তিনটি কারখানায় বুটিকের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ওই এলাকার ৫ শতাধিক নারী শ্রমিক।
এসব নারী সদস্যদের হাতে কাজ করা বুটিক শাড়ি যাচ্ছে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
জয়িতা আয়েশা বেগম জানান, আমার এই সম্মাননা সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য উৎসর্গ করেছি আমি। তবে আমার বুটিক কারখানায় সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা, সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা পেলে নারীর কর্মসংস্থান করাসহ উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। শিল্প কেন্দ্রীক সরকারি বেসরকারি উদ্যেগ গ্রহণে ভাগ্য বদল হতে পারে এ অঞ্চলের সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের। সরকারী বা কোন দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় আরো বহু মহিলার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশী প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।