শন সুতার সৌখিন সামগ্রীতে বৈদেশিক মুদ্রা
শামীম আহমেদ, বরিশাল : শন সুতা দিয়ে সুতলির ব্যাগ, পার্টস, সাইড ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, ব্যাচলেট, পুতুলসহ ৩৭১টি সৌখিন সামগ্রী তৈরির মাধ্যমে এসব সামগ্রী বিদেশে রপ্তানির করে দেশে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আর এ কাজের মাধ্যমে দু’শতাধিক নারী জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে আজ বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছেন। ঘটনাটি জেলার বিলাঞ্চল বলেখ্যাত প্রত্যন্ত আগৈলঝাড়া উপজেলার।
সূত্রমতে, বাল্য বিয়ে ও যৌতুকের কারণে অল্প বয়সে স্বামী পরিত্যক্তার খাতায় নাম লেখাতে হয়েছে মাসুদা খানম (১৮), শান্তনা রানী (১৭), রানু আক্তার (২৫)সহ শতাধিক নারীকে।
এছাড়া বিধবা, দুস্থ ও অসহায় অপর শতাধিক নারীরা অভাবের সংসারে যখন চারিদিকে অন্ধকার দেখছিলেন, ঠিক তখনই ওইসব নারীদের পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। কঠোর পরিশ্রমের কারণে ওইসব নারীরা প্রত্যেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাবার অভাবের সংসারে বাল্য বিয়ের পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় অধিকাংশ নারীকে অল্প বয়সে স্বামী পরিত্যক্তার খাতায় নাম লেখাতে হয়েছে।
একদিকে বাবার অভাবের সংসার, অন্যদিকে স্বামী পরিত্যক্তা হিসেবে যখন ওইসব নারীরা সমাজের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক তখনই তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বে-সরকারি সংস্থা মেনোনাইট সেন্টাল কমিটি (এমসিসি)। ওই প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শন সুতা দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে (হস্তশিল্পের মাধ্যমে) একদিকে যেমন স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীরা খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার পথ, তেমনি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি ওইসব নারীদের সু-নৈপূর্ণ হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আয় করছেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, জেন্ডার, কোয়ালিটি, এ্যাওয়ারনেস, পরিবেশ, চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সামাজিক মর্যাদার মাধ্যমে ওইসব নারীদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাওয়া এমসিসি প্রকল্পের আওতাভুক্ত বাগধা এন্টারপ্রাইজ নামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার কালীপদ অধিকারী জানান, ‘সঠিক পারিশ্রমিক-সঠিক ব্যবসা’ এ মূল সুরকে ধারণ করে দুস্থ অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৬টি দেশে বেসরকারি এ সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
তাদের কর্মসূচীর আওতায় দেশের হাজার-হাজার দুস্থ, অসহায় নারীরা আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাংলাদেশে এমসিসির ৯টি শাখায় অসংখ্য দুস্থ নারীরা তাদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আজ আত্মমর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছেন। একইসাথে ওই সংস্থাটি দুস্থ নারীদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল হিসেবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। যা দেশের জন্য রিতিমতো বয়ে এনেছে এক বিরল সম্মান।
আগৈলঝাড়ায় এমসিসির ৪টি প্রজেক্টে সহস্রাধিক দুস্থ নারীদের নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রকল্পগুলো হলো-বাগধা এন্টারপ্রাইজ, জোবারপার এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পাম হ্যান্ডিক্রাফ্টস ও বিবর্তন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক নারীরা উৎপাদনের ওপর প্রতিমাসে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এছাড়াও বছরের উৎপাদনের লভাংশ্য থেকে একটি অংশ এসব নারীদের মাঝে সমবণ্টন করে দেয়া হয়। যা দিয়ে প্রতিটি নারীরাই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।