জেএমবি নেতার মুক্তি চাইলো জঙ্গিরা তবে কী এরাই আইএস
বিশ্বজিৎ দত্ত : সশস্ত্রবাহিনী যখন ঘিরে ফেলে গুলশানের আক্রান্ত রেস্তোরাঁ, তখন বারবার ভিতর থেকে পণবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার শর্ত দিচ্ছিল সন্ত্রাসীরা। তাদের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল, অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে আটক জেএমবি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহকে। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাইট’ সূত্রের খবর, ইসলামিক স্টেট (আইএস) গুলশান হামলার দায় স্বীকার করেছে। জেএমবি নেতার মুক্তির লক্ষ্যে আইএস কেন হামলা চালাবে? তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। সরকারের তরফে আইএস প্রসঙ্গে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বারবার বলা হচ্ছিল বাংলাদেশে আইএস রয়েছে। সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি সবসময় অস্বীকার করে আসছে।
জঙ্গিদের দেওয়া এই শর্ত নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে। গোটা বিশ্বের সব জেহাদি গতিবিধির উপর নজর রাখে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, সেই ‘সাইট’ জানিয়েছে, আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু আইএস যদি হামলা চালায়, তা হলে জেএমবিম নেতার মুক্তির দাবিই প্রধান হয়ে উঠবে কেন? প্রশ্নটা উঠছে তা নিয়েই। হামলাকারীরা যে তিনটি শর্ত ঘোষণা করছিল, তার মধ্যে দুটি হলো নিজেদের পালিয়ে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে। আর অন্যটি তথা মূল দাবিটিই হলো জেএমবি নেতার মুক্তির।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, বাংলাদেশে যতগুলো জঙ্গি সংগঠন এবং কট্টরবাদী সংগঠন সক্রিয়, তাদের অধিকাংশই এখন নিজেদের আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত বলে প্রমাণ করতে চাইছে। আনসারুল্লা, জেএমবি তো বটেই, হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতেরও একটি অংশ নিজেদের আইএস বলে দাবি করেছে। এই সংগঠনগুলোর নিজেদের কার্যকলাপ স্বতন্ত্রভাবেই চলছে। তার সঙ্গেই বেশকিছু কার্যকলাপ তারা আইএস-এর নামে চালাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস বড়াতেই আইএস-এর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের এই মহলটির দাবি। যে জেএমবি নেতার মুক্তির দাবি ঢাকার হামলাকারীরা শর্ত হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেই জেএমবি নেতাকে হামলার একদিন আগেই ডেমরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাই বাংলাদেশের গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, আইএস নয়, হামলা চালিয়েছে জেএমবিই। নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরের দিনই যেভাবে হামলা চালিয়ে তার মুক্তির শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাতে এ কাজ অন্য কোনো সংগঠনের নয় বলেই স্থানীয় প্রশাসনের অনুমান। অন্য একটি অংশ বলছে, এ কাজ আইএস-এরই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনতে চাইছে তারা। গুলশানে হামলা চালানোর ছক আগেই কষা হয়েছিল। ইতোমধ্যে জেএমবি নেতা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় নিজেদের শর্তের সঙ্গে তার মুক্তির দাবিটাও জুড়ে দেয় জঙ্গিরা। সরকার আইএস-এর উপস্থিতি স্বীকার করে না। গুলশানের হামলার পর এখনও সরকার আইসিস কোনো মন্তব্যও করেনি। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম