জঙ্গিদের খতম করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন : রাজধানীর গুলশানে একটি স্পেনিশ রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কমান্ডো অভিযানের সময় ছয় হামলাকারীকে খতম করা হয়েছে এবং তাদের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপারেশন সফল হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কমান্ডো অপারেশনে ১৩ জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। রেস্তোরাঁর ভিতরে জিম্মি হিসেবে আটক কয়েকজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। গতকাল শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনের মহাসড়ক উদ্বোধনের সময় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা রাতে যখন হামলা চালায় তখন নামাজের সময় ছিল। যারা নামাজ বাদ দিয়ে মানুষ হত্যায় মেতে উঠে তারা কেমন মুসলমান? ইসলাম কি নামাজ বাদ দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে বলে? আসলে এসব হামলাকারীদের কোনো ধর্ম নেই, যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা এটিই প্রথম। এ হামলার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। অভিযান পরিচালনা করার জন্য সাভার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চৌকস সেনাসদস্যদের নিয়ে আসা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে প্রতিরোধের জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
উন্নয়নের দিক থেকে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হলো দেশ যখন এগিয়ে যায়, মানুষ যখন আনন্দে খুব উচ্ছ্বসিত হয়, ঠিক সেই সময় জানি না কেন, আমাদের উপর এক একটা আঘাত চলে আসে। গুলশানে জিম্মি ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি আপনারা সকলেই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত তৎপর ছিল। যেই মুহূর্তে ঘটনার খবর পাওয়া গেছে সেই মুহূর্তেই টইল পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে গেছে। পাশাপাশি ওই থানা পুলিশও চলে গেছে। তারা যখনি অ্যাকশন নিতে গেছে তখনই সন্ত্রাসীদের বোমাহামলায় আমাদের দুজন পুলিশ অফিসার মারা যান। আর প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হন। ঘটনা ঘটলেও আমরা সেখানে থেমে না থেকে সন্ত্রাসীদের আটকে রাখি। একারণে একজনও পালাতে পারেনি তারা। এর মাঝে আমরা সেনাবাহিনীকে ডাকি। সিলেট, সাভার ও ঢাকা ক্যান্টমেন্ট থেকে নিয়ে অভিযানের জন্য কমান্ডো দল গঠন করা হয়। শেখ হাসিনা আরও বলেন, এগুলো করতে করতে রাত যখন প্রায় ৪টা তখন সকলে মিলে গণভবনে বসে কিভাবে অপারেশন চালানো হবে তার পরিকল্পনাটা নেওয়া হয়। এরপর তারা সেখানে গিয়ে কমান্ডো দল অপারেশন শুরু করে। এই অপারেশনে একটিই সুখের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য আমাদের ১০ ঘণ্টা সময় লাগেনি। তার আগেই আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের উপর হামলা চালাতে সক্ষম হই এবং যারা জিম্মি ছিল তাদের ১৩ জনকে বাঁচাতে পেরেছি। কয়েকজন আহত অবস্থায় সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এই সফল অপারেশন করার জন্য প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নসহ সকল অপারেশনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। তারা আগে টুকটাক একটা দুটো করে মানুষকে হত্যা করে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ করেছে। যারা এভাবে জঙ্গি হয়ে ঢুকল এবং যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করল তারা তো নিজেরাও বাঁচতে পারল না।
শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসে একজন মুসলমান যখন নামাজ পড়বে, তা না করে আযান উপেক্ষা করে গেল মানুষ খুন করতে। তাহলে এরা কেমন মুসলমান? কেমন ধর্ম রক্ষা করল? নামাজ রেখে তারা মানুষ খুন করতে চলে গেল? আর সেখানে নিজেরাও বাঁচতে পারল না। তাদেরও মরতে হলো। তাদের পরিবারই বা কি পেল? কাজেই কেন যে এ ধরনের সন্ত্রাসের পথে মানুষ যায় এটা আমার বোধগম্য নয় বলেন প্রধানমন্ত্রী।
যেভাবে তারা হত্যাগুলো করেছে সেগুলো দেখা যায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেন একটা জিঘাংসা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। একটা মানুষ এভাবে আরেকটা মানুষকে কিভাবে আক্রমণ করতে পারে? তাও এই পবিত্র রমজান মাসে! তিনি বলেন, আসলে এরা কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না। এদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসটাই এদের ধর্ম। এটাই আমি মনে করি। যাই হোক, আল্লাহর রহমতে, এদের দমন করতে পেরেছি। এদেরকে খতম করতে পেরেছি। সেজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম