গলাকেটে লাশ স্তূপ করে রাখা হয় টেবিলের উপরে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জিম্মি সব বিদেশিকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। কোনো গুলি ব্যবহার করা হয়নি। গলাকাটার ধরন দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা এক একজনকে ধরে ধরে একাধিক জনে মিলেই হত্যা করে। আর একটা একটা করে লাশ তারা টেবিলের উপর স্তূপ করে রাখে। ঘটনার পর যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করেন ও ফায়ার ব্রিগেড উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য সেখানে যান, তারা সেখানে যাওয়ার পর এমন পরিস্থিতি দেখেছেন। যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ছিলেন নিচ তলায়। সেখানে অভিযানকারীরা ২০জন বিদেশি নাগরিকের লাশ পেয়েছেন বলে জানান। ওই ২০ জনের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ আর পাঁচজন নারী। তারা কেউ বাংলাদেশি নন। এরমধ্যে জাপানের নাগরিক আছে চারজন। ইতালির কয়েকজন। এছাড়াও বাকিরা অন্যান্য দেশের।
এদিকে যে পাঁচজন নারীকে হত্যা করা হয়েছে তাদের একজনকে টেবিলের নিচে হত্যা করে রাখা হয়। তবে নারীদের কারও পোশাক ছেঁড়া ছিল কিনা, কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে একটি সোর্স জানায়, কারও পোশাক ছেঁড়া ছিল না। তারা পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। তারা আলামত দেখে মনে করছেন, কেউ ধর্ষণের মতো কোনো ঘটনার শিকার হননি।
এদিকে সূত্র আরও জানায়, সকালে যখন আর্জেন্টিনার একজন নাগরিক ও বাংলাদেশি একজন বের হয়ে আসেন তারা বাইরে এসে জানায় যে, হোটেলের ভেতরে যেসব বিদেশি ছিল তাদের সবাইকে রাতেই হত্যা করা হয়েছে। তারা কেউ বেঁচে নেই। তবে দেশি কোনো নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে কিনা এই রকম কোনো তথ্য তারা যৌথবাহিনীকে দিতে পারেনি। তারা যখন বাইরে এসে বিদেশিদের হত্যা করা হয়েছে বলে জানায়, এরপরই আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ওই ঘটনার পর ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান লতিফুর রহমানের নাতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সিমিন হোসেনের ছেলে ফারহাজের এখন পর্যন্ত কোনো হদিস মিলেনি। তার ব্যাপারে উদ্ধারকারী ও অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের জানালেও তারা তার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। তবে বলেছেন ভেতরে তার লাশ নেই। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৮ জনের মধ্যে রয়েছেন কিনা এই ব্যাপারেও জানাতে পারেনি। এদিকে ইশরাত আকন্দেরও এখনও হদিস মেলেনি। তিনিও নিখোঁজ তারও লাশ ভেতের মেলেনি বলে জানান একজন উদ্ধারকারী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভেতরে কেবল বিদেশি ২০ জনের লাশ ছিল। কোনো বাংলাদেশির লাশ নেই। এছাড়া হামলাকারীদের ছয়জনের লাশ পাওয়া গেছে। হামলাকারীদের লেক ভিউর মাঠে পাঁচটা লাশ রাখা হয়েছিল আর একজন ভেতরে ছিল। হামলাকারীদের বাকি দুইজনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর একজনের ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে ৭-৮ জনকে আটক করা হয়েছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম