
‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর চলে অপারেশন থান্ডার বোল্ট’
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আইএসপিআর। এছাড়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানে অন্তত ৬ সন্ত্রাসী হামলাকারী নিহত হয়। শুক্রবার রাতে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। অর্থাৎ গুলশানে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মোট ২৮ জন নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা যে ২০ জনকে হত্যা করেছে তারা সবাই বিদেশি নাগরিক বলে জানা গেছে। অভিযান শেষ হলেও এখনও ইশরাত আকন্দ ও ফারহাজ নামে দুজনের লাশ পাওয়া যায়নি। তাদের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লতিফুর রহমানের নাতি। অভিযান শেষে সাত থেকে আটজনকে আটক করা হয়। এরমধ্যে একজন হামখারী গ্রুপের সদস্য। তাদেরকে আটকের পর তাদের জয়েন্ট ইন্টোরগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনায় গুলশানের জিম্মি উদ্ধারের অভিযান সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করে আইএসপিআর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, অভিযানে ৭ জন সন্ত্রাসীর মধ্যে ৬ জন নিহত হয় ও একজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মৃতদেহগুলোকে প্রচলিত নিয়ম মেনেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে। লাশ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ০১৭৬৯০১২৫২৪ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। চূড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের কেউ আহত হননি এবং শুক্রবার রাতে ২ জন নিহত হন।
গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তরাঁয় হামলার ঘটনায় ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে ৬ হামলাকারীও।
আটক করা হয়েছে সন্দেহভাজন একজনকে। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জনকে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন থান্ডার বোল্ট শুরু হয় সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আর শেষ ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মাথায়। মরদেহগুলো রাখা হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
সন্ত্রাসী হামলায় যে ২০ জন নিহত হয়েছে তারা সবাই বিদেশি নাগরিক। জিম্মি করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাতেই তাদের হত্যা করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানকারীরা ভেতরে ঢোকার পর ২০ জনের মৃতদেহ পায়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ঐ অপারেশন থান্ডার বোল্ট অভিযানে সেনা কমান্ডোরা ছাড়াও নৌ, পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাবের সদস্যরা অংশ নেন।
আইএসপিআর বলছে, অভিযানে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট থেকে উদ্ধারদের মধ্যে একজন জাপানি এবং দুই জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন।
সরকার প্রধান কর্তৃক আদেশের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অপারেশন থান্ডার বোল্ট পরিকল্পনা করে। সরকার প্রধানের সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য এই অভিযান সফল হয় বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালক (অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী। তিনি গুলশানের জিম্মি ঘটনার অভিযান শেষে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনটি প্রথমে বেলা সাড়ে তিনটায় হওয়ার কথা থাকলে পরে সেটা এগিয়ে সময় করা হয় বেলা সাড়ে ১২ টায়। কিন্তু পুলিশের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হতে দেরি হওয়ার কারণে দেড়টার কিছু সময় পর সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন নেওয়া হয়নি। দুই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর ডাইরেক্টর, মিলিটারী অপারেশন্স পরিদপ্তর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ৪৬ পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মজিবুর রহমান, সেনাবাহিনী প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এম এম ইমরুল হাসান। এছাড়াও র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবির, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আইএসপিআরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালক (অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী এর তরফ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য পড়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে বলা হয়, ১.আপনারা সকলে অবগত আছেন, যে গত ১ জুলাই ২০১৬ তারিখ রাত প্রায় পৌনে নয়টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর রোড নং ৭৯স্থ হরি আর্টিজান বেকারী নামক একটি রেষ্টুরেন্টে দুস্কৃতিকারীরা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে প্রবেশ করে। এবং রেষ্টুরেন্টের সকলকে জিম্মি করে। গঠনা ঘটার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ও এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে পুলিশ কর্ডন করে সন্ত্রাসীদের যথেচ্ছ কর্মকান্ড থেকে নিবৃত্ত করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনার জন্য মাননীয় সরকার প্রধান কর্তৃক আদেশ প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অপারেশন থান্ডার বোল্ট পরিকল্পনা করে। সেনাবাহিনী গতকাল রাত থেকে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যব সহযোগে সম্মিলিতভাবে অপারেশন থান্ডার বোল্ট পরিচালনা করা হয়।
২.বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করে ১২-১৩ মিনিটের মধ্যে সকল সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে টার্গেট এলাকার নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে , অপরাশনের অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করে সকাল ৮টা ৩০ ঘটিকায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। অভিযানের মাধ্যমে আমরা তিনজন বিদেশী নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সমর্থ হই। অভিযানে ৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং ১ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও অভিযানের শেষে তল্লাশী করে ২০ জন বিদেশী নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। যাদের অধিকাংশকেই ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যবহৃত ৪টি পিস্তল, ১টি ফোল্ডেড বাট একে ২২, ৪টি অবিস্ফোরিত আইইড, ১টি ওয়াকি টকিসেট ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের সদস্যদের কেউ হতাহত হয়নি।
৩. আপনারা অবগত আছেন, গতকাল (শনিবার) রাতের অপারেশনের অংশ নিয়ে ২ জন পুলিশ সদস্য শাহাদৎ বরণ করেন। তারা সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলায় অংশ নেন। আমরা অকুতোভয় এই দুই সদস্যর রুহের মাগফেরাত কামরা করি। এছাড়াও এই অপারেশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস এর সদস্যবৃন্দ নিরলসভাবে সাহসিকতার সাথে অংশ নেন। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সার্বিক কৌশলের ব্যবহারের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সঙ্গে এই অভিযান সফল করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। মাননীয় সরকার প্রধানের সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য এই এই অভিযান সফল হয়। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার অন্যান্য বিস্তারিত তথ্যাবলী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরবর্তীতে জানানো হবে। সম্পাদনা:সুমন ইসলাম
