মানবাধিকার কমিশন, খাতা থেকে কাজে নামুক এবার
বড় বড় সব খবরের ভিতর লুকিয়ে থাকা ছোট একটি খবর আমার নজর কেড়েছে। যে মানুষটির পদ গেছে বা বদল হয়েছে তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে দেখলেই মনে হয়, কোথা যেন দেখেছি তাহারে। মনে করিয়ে দিতেন পঞ্চাশ-ষাট দশকের নায়ক নায়িকাদের বাবা বা চাচাদের কথা। যিনি নায়ক গরিব বলে এ বিয়ে হবে না হতে পারে না ডায়লগ দিতে দিতে দোতলা থেকে নেমে আসতেন। হাতে পাইপ। পরণে বকলেস আঁটা পাতলুন। আমারও একসময় মনে হতো আহা! এমন পাতলুন যদি পরতে পারতাম। ঈশ্বর আমাকে গাঁধী আকৃতির মানুষ করে পাঠানোয় সে আশা পূরণ হয়নি। এই মানুষটি তা পূরণ করেছেন। মাঝে মাঝে তাকে মিডিয়ায় দেখলেও প্রায়ই থাকতেন আড়ালে। বেচারা যে বিপদে তাতে আর সন্দেহ কি। পোড়ার দেশে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পাতলুন যেমন বকলেস দিয়ে এঁটে রাখতে হয়, মানবাধিকারও তেমনি। গুম্ফধারী মিজানুর রহমানকে মাঝে মাঝে কাঁদতেও দেখেছি। আমার মনে হয়েছে, রংধনুর মতো তিনি। কোথাও ঘটনা ঘটে গেলে, মানুষজন ঘরবাড়ি হারালে, দাঙ্গা ফ্যাসাদে মারা গেলে সবকিছু শেষ হবার পর তিনি উদিত হতেন। মিডিয়া গুরুত্ব দিলেও গ্রামের মানুষ জানতেন তার কোনো পাওয়ার নেই। একবার এক গ্রাম্য সরল মহিলা বলেছিলেন, বেডায় মানুষ ভালা। তয় খালি কাঁদে। কিছু করবার পারে না।
বেচারী মিজানুর রহমানের কি দোষ? এদেশে পুলিশসুপারের বউ হত্যা হবার পরও বিচার নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। আইনের এতবড় পদে থাকা মানুষটিকে একবার দেখানো হচ্ছে খুনের সহযোগী, আবার এটাও বুঝতে পারছি তিনি একাজ করার মানুষ নন। দেখুন এর ফাঁকে কতটা তরল হয়ে গেছে তনুর ঘটনা। এমনভাবে চলতে থাকলে মানবাধিকার নিজেই কোনোদিন গুম-খুন বা চাপাতির শিকার হয় কে জানে? তবু আমরা একটি ডিজিটাল দেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। দেশে মানবাধিকার থাকবে না এটা কখনও হয়? কত মানুষ কতভাবে মারা গেল। প্রাণ দিল। ফাঁসিতে গেল। চাকুতে গেল। মানবাধিকার কমিশন দমল না। তারা আছে এবং থাকবে।
মিজানুর রহমানকে আমি মিস করব। অমন বকলেস পাতলুনের মডার্ন বাঙালির হাতে মানবাধিকার কমিশন আর কোনোদিন পড়বে কিনা কে জানে? তবে বর্তমান চেয়ারম্যান আইনজীবী আমীরুল ইসলাম নিঃসন্দেহে যোগ্য মানুষ। তাজ উদ্দীনের সহযোগী স্নেহধন্য এ মানুষটির নেতৃত্বে মানবাধিকার কমিশন নতুন গতি লাভ করুক। এদেশে এখন তার নাভিশ্বাস উঠছেল তাকে কোরামিন দেওয়া দরকার বৈকি।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন