বুকটাকে লজ্জা না ভেবে অঙ্গ ভাবা যায় না?
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
এদেশের মেয়েদের জন্য ‘বুক’ ব্যাপারটি ভীষণ অস্বস্তির। মেয়েরা নিজেদের শরীরের একটা অঙ্গ নিয়ে কি পরিমাণ বিব্রত থাকে তা তাদের চোখমুখ দেখলে বোঝা যাবে। রাস্তায় মেয়েদের পোশাক দেখলেই বোঝা যায়, সবসময় ওড়না আর জামার তলে তাদের সবচেয়ে কুৎসিত অঙ্গটি ঢেকে রাখার চেষ্টা। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বড়সড় একজন মানুষ হয়ে উঠেছি সেহেতু বুক নিয়ে যথেষ্ট তির্যক মন্তব্য শুনে শুনে আমি অভ্যস্ত। আমার সহজে চোখমুখ লাল হয় না বরং প্রতিবাদে ফুঁসে উঠি।
রাস্তার বখাটেদের আচরণ দেখলে মনে হয়, এরা এদের মায়েদের স্তন্যপান করেনি কখনও। একটা মেয়ে গায়ে ওড়না দেবে কি দেবে না, কোনপাশে দেবে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এদেশে মনে হয় এমন কোনো মেয়ে নেই যাকে শুনতে হয়নিÑ মালটা তো ভালোই, অথবা তোমার ব্রা’র সাইজ কত? আমাদের বুক দেখতে পুরুষদের মতন নয়। কিন্তু এই পুরুষেরা পৃথিবীতে আসার পর ভুলে গেছেÑ এরা পৃথিবীতে এসে পুরুষ হয়ে উঠেছে এই বুকওয়ালা মেয়েদের কল্যাণেই।
মেয়েদের বুক লজ্জার, ছেলেদের বুক গৌরবেরÑ এই ধারণাটা এই সমাজে খুব প্রচলিত। ছেলেদের অশ্লীল ইঙ্গিতগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছেÑ মেয়েদের বুকের দিকে তাকিয়ে দুধ চা খাবার কথা জোরে জোরে প্রচার করা। মেয়েদের জন্য বুকের পাটা টানটান করে হাঁটা অসভ্যতা এবং নির্লজ্জের মতন আচরণ। একটা মেয়ের মেরুদ- সোজা না হতে দেওয়ার পেছনে যে কয়টি কারণ লাগে তার মধ্যে এটির ভূমিকা খুব ভালোই আছে। পুরুষেরা তাদের মায়েদের স্তন্যপান করবে, বলিষ্ঠ পুরুষ হবে, তারপর একদিন বলবেÑ তোমার বুক লজ্জার, সেটা ঢেকে রাখ। কেন? মেয়েদের মানুষ ভাবা যায় না? বুকটাকে লজ্জা না ভেবে অঙ্গ ভাবা যায় না?
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন