মহানবী (সা.) কি আইএস সম্পর্কে সতর্কতা দিয়েছেন
কাসিফ এন চৌধুরী: কোরআনের শিক্ষার সঙ্গে আইএসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। পবিত্র কোরআনের দুইটি সূরায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে। যে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল (সূরা: মাইদা, আয়াত: ৩২)। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মানব হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ (সূরা:বাকারা, আয়াত:২১৭)
ইসলামের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে হামলা এবং মুসলমান হত্যায় পারদর্শী হয়ে উঠা জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিষয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তার উত্তরসূরীরাও বলে গেছেন। নবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এমন এক সময় আসবে যখন ইসলামের নাম ছাড়া কিছু থাকবে না, আর কোরআনে থাকবে কেবল অক্ষর। মসজিদ জাঁকজমকে পূর্ণ থাকবে, তবে সত্য পথের নির্দেশনা থাকবে না। বর্তমানের সময়টা পর্যালোচনা করলে আমরা সেই বিষয়টাই অনেক বেশি করে উপলব্ধি করতে পারি। আইএস সম্পর্কে সাবধান করেছিলেন মহানবী (সা.)?
হাদিস সংকলন ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ বলা হয়েছে ‘সেই দিনগুলোতে’ ইসলামের আধ্যাত্মিক মর্ম ‘হারিয়ে যাবে’ এবং অধিকাংশের কাছে ধর্ম ‘সীমাবদ্ধ থাকবে’ কেবল আচারের মধ্যে। আর ইমামরা ‘দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’ হবেন, পরিণত হবেন ‘তত্ত্বীয় বিবাদের কেন্দ্রে’। “মুসলিম বিশ্বের একটি উগ্রপন্থী অংশের নেতাদের ক্ষেত্রে এই বাক্যগুলো হুবহু মিলে যাচ্ছে। যারা মিম্বর ব্যবহার করে বিভক্তি আর বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।”
মহানবী আজকের আইএসের বিষয়েই সতর্ক করেছিলেন কি-না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হাদিস গ্রন্থ সহিহ মুসলিম থেকে পাওয়া যায়, “তিনি (মহানবী) এটাও বলেছিলেন, আইএসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ইসলামের বিশ্বাসকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে, যারা চিন্তায় হবে অপরিণত’। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে, কিন্তু করবে সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ। তারা এত বেশি ধর্ম পালন করবে, যার কাছে মুসলমানদের ইবাদত তুচ্ছ বলে মনে হবে।
“তারা মানুষকে কোরআনের কথা বলবে, কিন্তু তা হবে কেবল তাদের মুখের কথা। অর্থাৎ, তারা এর মর্মার্থ বুঝবে না, কেবল বেছে বেছে কিছু অংশ আওড়াতে থাকবে। মহানবী তাদের ‘সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট’ বলেছেন।”আইএস সম্পর্কে সাবধান করেছিলেন মহানবী (সা.)?
কিতাব আল ফিতানে মহানবীর চতুর্থ উত্তরসূরি খলিফা আলী (রা) বর্ণিত আরেকটি হাদিসের কথা বলা যায়। সেখানে এদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘কালো পতাকাধারী দীর্ঘ চুলের পুরুষ’ হিসেবে। বলা হয়েছে, তাদের ‘অন্তর হবে লোহার মতো শক্ত’ এবং তারা একটি রাজ্যের (আসাব উল দাউলা) প্রতিনিধিত্ব করবে। মজার বিষয় হল, আইএস নিজেদের ইসলামিক স্টেট বা দাউলা হিসেবেই পরিচয় দেয়।
“হাদিসে আরও বলা আছে, তারা তাদের করা চুক্তি লঙ্ঘন করবে, অসত্য বলবে এবং নিজেদের নামের সঙ্গে যুক্ত করবে শহরের নাম। এ প্রসঙ্গে আইএসের খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীর নাম মনে আসে।”
সার্বিক বিষয়ে এ উগ্রপন্থীদের ফিতনা এবং বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইসলামের ভিত্তিগুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন। এবং সমস্যার সমাধানে ইসলামের কাছে ফিরে আসা, কোরআন এবং হাদিসে সমাধান খোঁজা। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
নোট: কাশিফ এন চৌধুরী পাকিস্তাানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। তিনি চিকিৎসক, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী। এই লেখাটি তিনি ২০১৫ সালের ১ জুলাই হাফিংটন পোস্টের নিবন্ধে লিখেন।