পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হলো না কুক সাইফুলের
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হলো না সাইফুলের। ঈদের ছুটিতে কলুকাঠি গ্রামের বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ করার কথা ছিল তার। লাশ হয়েই বাড়ি ফিরছে সে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে শুক্রবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নিহত হয়েছে।
হামলার খবর শোনার পর থেকেই তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এখনো লাশ বাড়ি পৌঁছেনি। কখন পৌঁছাবে তাও বলতে পারছে না কেউ। লাশ বাড়িতে না পৌঁছালেও আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ শত শত লোক বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। তার বন্ধু বান্ধব ও পরিবারের লোকজন তার এ অস্বাভাবিক মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে রোববার দুপুরে সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সোনিয়া আকতার (২৭) তার দুই কন্যা সামিয়া (১০) ও ইমলিকে (৭) নিয়ে বাড়িতে আহজারি করছেন। পাশের ঘরে মা সমেরা বেগমের (৭০) আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সান্ত¡Íনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। সাইফুলের মায়ের বুকফাটা কান্না দেখে স্বজনরা তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। বারবার ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তিনি মূর্ছা যাচ্ছেন।
নিহত সাইফুল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের ৫ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। তার ছোট ভাই বিল্লাল মালয়েশিয়া থাকে। ৩ বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১০ বছর সে জার্মানিতে থাকার পর দেশে ফিরে। এরপর গত দেড় বছর ধরে তিনি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পিজা তৈরির কুক হিসেবে কাজে যোগদান করেন।
আর অল্প কদিন পরই তৃতীয় সন্তানের মুখ দেখতেন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। পরিবারের লোকজন জানান, সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
সোনিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এক মাস আগে সে বাড়ি আসছিল। শুক্রবার বিকেলে তার সাথে শেষ কথা হয়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাকে বারবার ফোন করা হলেও সে ফোন রিসিভ করেনি।
সোনিয়া বলেন, আমার দুটি মেয়ে এবং অনাগত সন্তানের কি হবে। ওরা কাকে বাবা বলে ডাকবে। কি করে আমি বাঁচব?
সাইফুলের মা সমেরা বেগম বলেন, হাসিনা-খালেদা এসব সন্ত্রাসী বন্ধ করে না কেন। আর কত মায়ের বুক খালি হবে। আমার বাবা কে কি তোমরা এনে দিতে পারবে? সম্পাদনা : পরাগ মাঝি