গুলশান হামলার আগাম তথ্যের যাচাই-বাছাই
রাশিদ রিয়াজ : একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, গুলশানে সন্ত্রাসীদের হামলার সাড়ে ৯ ঘণ্টা আগে বেলা ১১টায় আইএস টুইট করলেও আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ জানে না কেন? আইএস তাদের বক্তব্য টুইট করার পর আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ তখন কী করল? কেন আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিলাম না। গত শনিবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনে একাত্তর সংযোগ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গুলশানে ডিপ্লোমেটিক জোনে হামলার আগে ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, মসজিদের ইমামের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। হত্যা করেছে। তারও আগে বিদেশি নাগরিকদের উপর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হামলা হয়েছে। হামলা হয়েছে ব্লগারদের উপর। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। চাপাতি, বোমা থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। এরা আইএস না জঙ্গি, দেশি না বিদেশি, আরবিতে না হিন্দিতে কথা বলে এসব বিবেচনার বাইরে এরা সন্ত্রাসী। অতএব, যে ধরনের সন্ত্রাসী সে ধরনের মোকাবিলায় গোয়েন্দা থেকে শুরু করে র্যাব ও পুলিশ শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে কেন ভেবে দেখতে হবে। সেনাবাহিনীর কাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা নয়, প্রয়োজনে তাদের ব্যবহার পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে মাত্র।
গত কয়েকমাসে ‘ইসলামিক স্টেট’-এর কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বাড়ানোর জন্যে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিল। তাদের প্রচারণা ‘দাবিকে’ একাধিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাস গুরুত্ব পেয়েছে। সন্ত্রাসীরা গত কয়েকমাসে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে যতকথা বলেছে, তারচেয়ে বেশি বলেছে বাংলাদেশ নিয়ে। রমজানের সময় বিশ্বের বিভিন্নস্থানে তাদের হামলার পরিকল্পনার মধ্যে বাংলাদেশের উল্লেখ ছিল। সর্বশেষ প্রকাশিত হিটলিস্টেও বাংলাদেশের নাম রয়েছে। তাহলে গোয়েন্দারা এতদিন ধরে কি খতিয়ে দেখছিলেন?
গুলশানে সন্ত্রাসীরা হলি আর্টিজানে জিম্মি বিদেশিদের একের পর এক হত্যা করছে আর সে বীভৎস ছবি নেটে পোস্ট করছে, অন্যদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছিল, প্রাণহানি রোধে জঙ্গিদের সঙ্গে ‘নেগোশিয়ট’ করার চেষ্টা চলছে। একটি গণমাধ্যমে এটাও বলা হয় যে, ঘটনাস্থলের একটি ম্যাপ তৈরির চেষ্টা করছে পুলিশ। অথচ গুগল ম্যাপসে সেই হোটেলের পুরো ম্যাপ রয়েছে, স্ট্রিটভিউতে দেখা যায় হোটেলের ভিতরের সবকিছু! এ অবস্থায় জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় কয়েকটি মিডিয়া। এটা স্পষ্ট যে, সন্ত্রাসীরা হলি আর্টিজানে ঢুকেই দ্রুত বিদেশি নাগরিকদের হত্যার পরপরই তাদের বীভৎস ছবি পাঠাতে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে। ওই এলাকার ইন্টারনেট, ভাইবার সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার আগেই সন্ত্রাসীরা যা করার তা করে ফেলেছে। কারণ গোয়েন্দারা ‘ইসলামিক স্টেট’-এর হুমকিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে পারেনি। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে কারণ বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করার জন্যে তাদের ১২ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়নি।