২৮ ফেব্রুয়ারি কোচিংয়ের জন্য বের হয়ে আর ফিরেনি মুব্বাসীর
বিপ্লব বিশ্বাস : চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বনানী ডিওএইচএসের বাসা থেকে গুলশানে একটি কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল স্কলাসটিকা থেকে ‘ও’ লেভেল শেষ করা মীর সামেহ মুব্বাসীর (১৮)। অনেক খোঁজ করেও ছেলেকে না পেয়ে গুলশান থানায় জিডি করেন মুব্বাসীরের বাবা অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মীর হায়াত কবির।
অভিযানে নিহত মুব্বাসীরের মা খালেদা পারভীন সরকারি তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তারা দুই ভাই, বড় ভাই মীর সাদমান মুনতাসিম কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন করছেন।
ওই হামলায় জড়িত দাবি করে সাইট ইন্টেলিজেন্স পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছে। এদিকে পুলিশও শনিবার রাতে নিহত পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছে। দুই ছবির অন্তত চারজনের চেহারার মিল রয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিদের সঙ্গে মীর সামেহ মুব্বাসীরের চেহারার মিল রয়েছে। পুলিশ ওই পাঁচজনের নাম বলেছে- আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি।
মুব্বাসীরের চাচা এমএ হাসান আল মুরাদ জানান, নিখোঁজের দিন বিকেল ৩টায় প্রাইভেটকারে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের আর এ কোচিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় মুব্বাসীর। পরে গাড়িচালক জুয়েল তাকে আনতে গেলে আর পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন মুব্বাসীর কোচিং সেন্টারে যায়নি বলেও সেখান থেকে জানানো হয়। মুব্বাসীরের খুব ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু ছিল না বলে জানান তার খালাত বোন সারাহ বিনতে হামিদ। তিনি বলেন, (মুব্বাসীর) খুবই সাদাসিদে, বন্ধু বলতে তেমন কেউ নেই।
এদিকে, নিখোঁজের দিন শুধু গাড়িচালক ছাড়া পরিবারের বাইরের কারও সঙ্গে তার মোবাইলে যোগাযোগের তথ্য পায়নি পুলিশ। জিডির ভিত্তিতে গাড়িচালক জুয়েলকে আটক করে পুলিশ। বের করা হয়েছে মুব্বাসীরের মোবাইলের কল লিস্ট।
গুলশান থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নাজমুল আলম বলেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল বলেছে, যানজটের কারণে মুব্বাসীরকে কোচিং সেন্টারের আগেই নামিয়ে দিয়েছিল। চালক কখনও বলছে, মুব্বাসীরকে বনানী ১১ সামনে নামিয়ে দিয়েছে। আবার বলছে, আজাদ মসজিদের কাছে নামিয়ে দিয়েছে। ওই সময় মুব্বাসীর যে সব এলাকায় যেতে পারে সেসব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে নাজমুল বলেন, পরে দেখা যায় মুব্বাসীর বনানী সংযোগ সেতু এলাকায় রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথা বলছে এবং একপর্যায়ে রিকশাযোগে স্থান ত্যাগ করছে। ঘটনার দিন মুব্বাসীর বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তার মা কলেজ থেকে বাসায় ফিরলে মা-ছেলের মধ্যে শেষ কথা হয় বলে খালাত বোন সারাহ জানান। তিনি বলেন, খালা বাসায় ঢোকার সময় মুব্বাসীর কোচিংয়ের জন্য বের হচ্ছিল। মা ছেলের মুখোমুখি হওয়ার পর নাস্তা খেতে বলেছিলেন খালা। কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরে নাস্তা করবে বলে সে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সে আর ফিরেনি। পরে পরিবারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন জায়গায় মুব্বাসীরের খোঁজ করে কিছু পাওয়া যায়নি। মুক্তিপণ চেয়েও কেউ ফোন করেনি বলে জানান সারাহ। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম