চেষ্টা করি মেদহীন সাংবাদিকতার : ফারজানা রুপা
শান্তনূ : গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা ও এসময় সাংবাদিকদের কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ বিষয় ব্যক্ত করে একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র সংবাদকর্মী ফারজানা রুপা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসটি আমাদের সময় ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সাংবাদিকতার দায় ও আপনার অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা (সেই অনুভূতি সবসময় সঠিক বা সত্য নাও হতে পারে. . .!)
সাধারণত ফেসবুকের আক্রমণাত্মক বক্তব্য, সমালোচনা, হুমকির জবাব দেই না। মনে হয়, কেউ যদি দুটো গালি দিয়ে মন খুশি করে তবে তাওতো পাওয়া। কিন্তু, সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায়, টানা ২০ ঘণ্টার উত্তেজনাকর খবর সংগ্রহের ক্লান্তির মধ্যেও জবাব দেওয়ার এই চেষ্টা। আপনাকে সন্তুষ্ট করা আমার লক্ষ্য নয়, কেবল অবস্থানটি বুঝবেন সেই আশা।
প্রসঙ্গ ১. বাথরুমে জিম্মি আটক : খুব সচেতনভাবে তথ্য দিয়েছি যে, বাথরুমে আটক জিম্মি আমাদের জানিয়েছেন। আপনার শঙ্কা সন্ত্রাসীরা আমার দেওয়া তথ্যের ফলে ভিক্টিমের অবস্থান জেনে তার ক্ষতি করবে। আর সেই ক্ষতির আশঙ্কায় আপনি বোধহয় আপনার পুরো কথায় মনোযোগ দিতে পারেননি। যেখানে আমি বলেছি, জঙ্গিরা বাথরুমে বন্দির অবস্থান সাথে সাথেই টের পান। এবং বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দ্যান। ফলে, আমি তাদের গোপন স্থানের তথ্য জানাচ্ছি বিষয়টি একেবারেই তা নয়। এই সংক্রান্ত ঐ ব্যক্তির এসএমএস আমার ফোনে আছে। যদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় তাও বলি, আটকে পড়া ঐ ব্যক্তি, বাথরুমে তোলা সেলফিসহ ফেইসবুক পোস্টেও নিজেদের অবস্থান ফাঁস করেছেন। কারণ, তাদের ভয় হচ্ছিল জঙ্গি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া জীবন বাথরুমে অক্সিজেনের অভাবে মরে যাবে। ফলে, তারা দ্রুত বাইরের সাহায্য চাইছিলেন।
প্রসঙ্গ ২. ফরাসি দূতাবাসের কর্মকর্তা আটকা পড়েছেন?
ঠিক যেই সময় এনডিটিভিসহ বেশ কয়েকটি টিভি ব্রেকিং দিচ্ছিল দুই রাষ্ট্রদূত নিহত হওয়ার, সেই সময় আমার সামনে দাঁড়ানো ফরাসি দূতাবাসের উদ্বিগ্ন কর্মকর্তা। তার রাতও কেটেছে আমাদের সাথে, একই পথে। অব দ্যা রেকর্ড বলেছিলেন সহকর্মী আটকে পড়ার খবরের তথ্য জানতে তিনি এসেছেন। তাকে উদ্ধৃত করে বলেছিলাম. . .।
প্রসঙ্গ তিন. জবাই
আপনার ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। এই ভয়ের কারণে আর নিরাপদ জীবনের খোঁজেই তো আপনি পরিজনসহ বিদেশমুখী। তাতে আমার স্বস্তি, কারণ, আপনি ভালো আছেন। আতঙ্কিত হওয়ার মতো ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে,আপনি কি চান আমরা সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরও গোপন করি। কারণ, আমার কাছে তো তখন জবাই করা মানুষের রক্তাক্ত ছবি। আর আজকেতো আপনার মাথা ঠা-া, শুনেছেনতো, সেনা কর্মকর্তাও ‘ধারালো অস্ত্রের আঘাতে’ বেশিরভাগ হত্যা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন।
….. চেষ্টা করি মেদহীন সাংবাদিকতার। নিরাপদ জীবনের হাতছানি এড়াতে পেরেছি, এই দেশটা আমার জন্মভূমি বলে। মূর্খ হতে পারি। শিক্ষা-দীক্ষার অভাব থাকতে পারে। তবে, সাংবাদিকতা, মনে রাখবেন, বাংলাদেশে সঠিক সাংবাদিকতা, তাতে আপনার প্যাঁচানো ভাবনার মারপ্যাঁচ নেই একটুও। ভালো থাকবেন সকলে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ