দেশটা ভারত নিয়ে নিলো?
শান্তনূ : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা ও হত্যাকা-ের ব্যাপারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নাট্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন।
‘দেশটা ভারত নিয়ে নিলো? ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করার চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ?’
তিনি লিখেছেন, ‘যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের ছবিগুলোর দিকে তাকাতে পারি নাই। এসব বিকৃত লাশের ছবি দেখার পরও কিভাবে আমরা গাইবোÑ এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’? বিদেশিরা যখন জানতে চায় বাংলাদেশ কি আফগানিস্তান হতে চলেছে, তখন আমাদের গলায় আর কতদিন জোর পাবো বলতে ‘না’?’
হতাশা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘কতটা পৈশাচিক হলে মানুষ এ কাজ করতে পারে? এর পর আমি পিশাচদের দেখতে গেলাম ফেসবুকে। আমি দেখি আমি অন্ধ। পিশাচ খুঁজি, প্রোফাইলে ভাসে একদল হাস্যোজ্জ্বল তরুণ যারা মায়ের সাথে, বোনের সাথে, বন্ধুর সাথে মায়াভরা চোখে পোজ দেয়, যারা পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান বলে পোস্ট দেয় কয় মাস আগেও । কে তাদের এত দ্রুত মানুষ থেকে অমানুষ বানালো?
কি বলে তাদের ব্রেনওয়াশ করলো, ওদের ভেতরের কোন ক্ষোভকে পুঁজি করলো? সামনে এদেরই মতো আরও কাউকে যখন ব্রেনওয়াশ করবে কোন ক্ষোভের দাবানলকে পুঁজি করবে?’
মনে জিজ্ঞাসা রেখে ফারুকী লিখেছেন, ‘দেশটা ভারত নিয়ে নিলো? ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করার চক্রান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ?’
বিপদগামী তরুণদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘ওহে তরুণ, তোমার কানের কাছে যারা এসব বলবে তাদের প্রশ্ন করো, এসব করলে কি দেশ উদ্ধার হবে নাকি আরও বিপদে পড়বে? প্রশ্ন করোÑএসব বিকৃত লাশ আর ‘আল্লাহু আকবর’ ডাক দিয়ে করা নিষ্ঠুর খুন কি ইসলামের ইমেজ বৃদ্ধি করবে না ধ্বংস করবে? মনে রাখবা, তুমি যখন ছোটো ছিলা তখন তোমার বাবা-মাকে তোমার দরকার ছিল। এখন তুমি যখন বড় হচ্ছো তোমার বাবা-মায়ের তোমাকে খুব দরকার । তাদের হাত ধরে যেমন তুমি হাঁটা শিখেছিলে, তাদেরও এখন তোমার হাতটা ধরা দরকার । তুমি যখন জড়ানো পায়ে হাঁটতে, তারা এক মুহূর্তের জন্যেও তোমার হাত ছাড়তো না যাতে তুমি পড়ে না যাও। সেই তুমি কিভাবে আজকে তাদের হাত ছেড়ে দিবা? তোমাকে তাদের দরকার।
তোমাকে তোমার বোনের দরকার, ভাইয়ের দরকার, বান্ধবীর দরকার, এমন কি যে দেশ আর ধর্ম রক্ষার জন্য তুমি জীবন দিতে চাও সেই দেশ এবং ধর্মেরও তোমাকে দরকার।
পরিশেষে ফারুকী লিখেছেনÑ ‘তুমি না থাকলে সুন্দরবন বাঁচাবে কে? ট্রানজিট মাসুল নির্ধারণের নামে যে হাস্যকর ফি ধার্য করা হলো এর যুক্তিযুক্ত প্রতিবাদ কে করবে? আমাদের সাগরে চোখ পড়েছে পশ্চিম-পূর্ব সকলের। তোমার সজাগ উপস্থিতি ছাড়া কে বাঁচাবে আমাদের সাগর। তুমি তো দেশ বাঁচাতেই চাও। তাহলে তোমাকেই তো থাকতে হবে।
তোমার জীবন অদরকারী নয়, যেমন অদরকারী না তোমার ছুরির ঐ পাড়ে থাকা জীবনটাও। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ