পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কৌশল প্রয়োজন : আলী রিয়াজ
নাসিমুজ্জামান সুমন : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, গুলশানের হত্যাকা- প্রত্যক্ষভাবে সরকারকে দুর্বল করার কোনো কারণ নেই। যেহেতু ঘটনাটি রাজনীতির বাইরে নয় ফলে রাজনৈতিভাবে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের জন্য এখন জরুরি হচ্ছে একটি কৌশল তৈরি করা। রাজনৈতিক দিকই হচ্ছে সেই কৌশলের অন্যতম দিক। কারণ, এই ধরনের জঙ্গিবাদকে কোনো অবস্থাতেই সামরিকভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংযুক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তখন কেবলমাত্র সামরিক ব্যবস্থা দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। এর জন্য অবশ্যই একটি রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োজন। যেন এই কৌশলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করা যায়। সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রাজনৈতিকভাবে অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তবে সেটা দরকার। তিনি গতকাল রোববার বিবিসি বাংলাকে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন কী রকম হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে সকলের অন্তর্ভুক্তি। এবং সেই অন্তর্ভুক্তির জন্য একটা পদ্ধতি বের করতে হবে। সমাজে যেসব শক্তি এই ধরনের উগ্র-সহিংসতার বিরুদ্ধে আছে তাদেরকে একত্রিত করতে হবে। এর জন্য সর্বস্তরের কথা বলার জায়গা তৈরি করতে হবে। উগ্র সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মধ্যে যে শক্তি আছে তারচেয়ে বড় শক্তি আর নেই। এই শক্তিকে বর্তমান সরকার একত্রিত করতে পারবেন কিনা সেটা নির্ভর করবে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং না নেওয়ার উপরে। এখন সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ যে, তারা রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে চান, নাকি তারা যে কৌশল ব্যবহার করছে তা অব্যাহত রাখতে চান। যে কৌশল গ্রহণ করেছিলেন তা কার্যত সফল হচ্ছেনা বলেই দেখা যাচ্ছে। ফলে এখন সুস্পষ্ট পদক্ষেপ দরকার, যাতে সমাজের, সিভিল সোসাইটির, বিরোধী দলের সবাইকে একত্রিত করে জাতীয় ঐক্য তৈরি করা যায়।’
দেশের ভিতরে সর্বত্রই এক ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে যে, রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকলে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ভাবতে হবে কী?
‘বর্তমান পরিস্থিতিকে রাজনীতি থেকে বাইরে রাখা সম্ভব নয়। নাগরিকরা নিরাপত্তা চায় বলেই তাদের মধ্যে এই তাগিদটা তৈরি হয়েছে। এবং বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, দেশের বাইরে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সেই দিকগুলো বিবেচনা করে অবশ্যই একটা কৌশল তৈরি করতে হবে। এবং সেই কৌশলের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্যগুলো যতদূর সম্ভব দূরে রেখে এবং যতদূর সম্ভব ঐকমত্য তৈরি করেই অগ্রসর হতে হবে। এবং সেটা করতে না পারলে যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা করছেন তাদের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে। যেটা সরকার থেকে শুরু করে বাংলাদেশের নাগরিকরা কেউই চান না।’ সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ