ঈদের পর বিএনপির চিন্তায় আন্দোলন আওয়ামী লীগের টার্গেট কাউন্সিল-নির্বাচন
জয়ন্ত আচার্য : ঈদ পরবর্তী দেশের রাজনীতির অঙ্গন জমে উঠবে বলেই মনে হচ্ছে। সরকারবিরোধী দুই দফা ব্যর্থ আন্দোলনের পর ঈদের পর আবারও মাঠে নামতে চায় বিএনপি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চিন্তা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। অপরদিকে আওয়ামী লীগের টার্গেট আগামী জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া।
সূত্র জানায়, আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্ততি চলছে দলের অভ্যন্তরে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ঈদের পর স্বাধীনতাবিরোধীদের সৃষ্ট চলমান গুপ্তহত্যা, জঙ্গিপনার বিরুদ্ধে, তাদের সাম্প্রদায়িক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি সঙ্গে নিয়ে নানা কর্মসূচি দেবে। গুলশানের হোটেলে জঙ্গি হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো আরও কাছাকাছি আসবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল মনে করছে। জাতীয় পার্টি ও বামদলগুলো ঈদ পরবর্তী নিজেদের সাংগঠনিক ভিতকে দৃঢ় করতে নানা কর্মসূচি দেবে।
আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল। ঈদ পরবর্তী আওয়ামী লীগ ব্যস্ত হয়ে উঠবে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে। কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন গ্রুপিং-লবিংয়ে ব্যস্ত। কার্যত ঈদের পর কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে আরও জমে উঠবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এদিকে ভিতরে ভিতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকায় কার্যক্রম তদারকি শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা। দলীয় সংসদ সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকায় থাকার পরামর্শ দিয়েছে দলের নীতিনির্ধারকরা।
অপরদিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের চলমান সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা, জঙ্গিপনার বিরুদ্ধে ১৪ দলে নানা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। এ ইস্যুতে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। এই ইস্যুতে ১৪ দলের বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ আন্দোলনের বৃহত্তর জোট করতে চায় ।
ঈদ পরবর্তী বিএনপির সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টি ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই প্রধান টার্গেট। জানা গেছে, এ লক্ষ্যে কয়েক জেলায় সমাবেশ করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করবেন। আন্দোলনের একটি রোডম্যাপ তৈরির জন্য তিনি সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
রাজপথে নামার আগে দলের পুনর্গঠনও শেষ করতে চায় বিএনপি। একই সঙ্গে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের কাজও শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
দেশের বামপন্থী দলগুলোও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাম্প্রদায়িক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে ঈদ পরবর্তী নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে। সোচ্চার হবে জামায়াত নিষিদ্ধ করার ইস্যুতে। জাতীয় পার্টি আগামী দলীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিতে চায়। এ নিয়ে তারা দল গোছাবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ঈদ পরবর্তী আওয়ামী লীগের কার্যক্রম প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ঈদের পর কাউন্সিল করার জন্য সকল প্রস্তুতি চলবে। বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্ট চলমান গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা হবে ।
জাসদের একাংশের সভাপতি এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সারাদেশে আমরা আমাদের সংগঠনের ভিত শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। আগামীতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির কবর রচনা করতে চাই ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ও সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকা-ের প্রতিবাদে বিএনপি আন্দোলনের মধ্যেই আছে। বিএনপি সবসময়ই জনদুর্ভোগসহ জাতীয় ইস্যুতে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করেছে। ঈদ পরবর্তীতে আন্দোলন জোরদার করা হবে।