পাশে রয়েছে দিল্লি, তবু ইসলামাবাদকেও চাইছি আমরা
অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় : বিপদে প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঢাকা তথা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের থাবা থেকে রক্ষা করতে সব রকমভাবে সাহায্য করবে ভারত, ঘোষণা নয়াদিল্লির। প্রত্যাশিতই ছিল। পড়শি বৈরী হলেও বিপদের ক্ষণে তার পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা ভারতের মজ্জাগত। বাংলাদেশ তো ঘনিষ্ঠ পড়শি। সর্বশক্তি দিয়ে যে নয়াদিল্লি ঢাকাকে আগলে রাখবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু আরও একটু ভালো লাগত, যদি ভারতের পশ্চিম প্রান্ত থেকেও একই বার্তা ভেসে আসত। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও যদি পাশে থাকার একটা জোরদার বার্তা দিতেন ঢাকাকে, তা হলে লড়াইটা আরও জোরদার হতো। দায়সারা বা নিয়মরক্ষার সমবেদনা হয়তো অনেক দেশ থেকেই পৌঁছাবে ঢাকায়। পাকিস্তানের কিন্তু সেই গোত্রে সামিল হওয়ার কথা নয়। ইসলামাবাদ থেকে খুব মজবুত একটা কণ্ঠস্বর আশা করা গিয়েছিল। কান পেতেও তা শোনা গেল না। বিপদের এই ক্ষণে নয়াদিল্লির মতোই ইসলামাবাদেরও খুব জোরালোভাবে ঢাকার পাশে থাকার বার্তা দেওয়া উচিত? উচিত একটি নয়, একাধিক কারণে। সূত্র : আনন্দবাজার
প্রথমত, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ শুধু পরস্পরের পড়শি নয়, তারা পরস্পরের সহোদরবৎ। দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বত্র এবং সর্বস্তরে রুখে দাঁড়ানো পাকিস্তানের জন্য এখন একটি নির্বিকল্প আবশ্যিকতা। অন্য কোনো পথ নেই। কারণ, পাকিস্তান এখন শুধু সন্ত্রাস রপ্তানি করে না। নিজেদের ভূখ-ে বেলাগাম, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়া সন্ত্রাসের কারবারিদের হাতে নিজেও সে দেশ রক্তাক্ত হয় প্রায় রোজ।
তৃতীয়ত, সন্ত্রাস এখন গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের সামনেই খুব বড় বিপদ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানÑ সন্ত্রাসের নখর রক্তপাত ঘটাচ্ছে সর্বত্র। এর মোকাবিলা যৌথভাবেই করতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে এই চার দেশ থেকে এক সঙ্গে নির্মূল করতে হবে। নচেৎ, এ রক্তবীজের বিনাশ অসম্ভব।
নওয়াজ শরিফ ভুলবেন না, পৃথিবীর এই প্রান্তটায় সাধারণ মানুষের মুখ-চলতি প্রবচনেও ‘দিল্লি-লাহোর-ঢাকা শহর’ এক সঙ্গে উচ্চারিত হয়। রাজনৈতিক ভেদরেখা আমাদের ভেঙে রাখলেও, আমাদের শিরায় শিরায় একই রক্তের স্রোত। ঢাকায় রক্তপাত শুধু ঢাকার সমস্যা নয়। সমস্যা গোটা উপমহাদেশের। তাই মোকাবিলাটাও ঐক্যবদ্ধ চেহারায় হওয়া দরকার।
ভরসা রাখছি শুভবুদ্ধির উপর। যা অমোঘ, জয় তারই হবে। মেঘমন্দ্র স্বরে ঢাকার পাশে থাকার বার্তা দিতে পারা যাক বা না-ই যাক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে নওয়াজ সঙ্গেই থাকবেন বলে আশা রাখছি। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা