তারুণ্যের মগজ ধোলাই
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
গুলশানের ক্যাফেতে নাশকতার জন্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবির জঙ্গিদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবহার হয়েছে ঠিকই, তবে তারা কাদের হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে, আইএস না আল কায়েদার? জঙ্গিরা তিনটি দাবি করেছিল বলে যে কথা চাওড় হয়েছিল জিম্মি সংকটের সময়Ñ তার একটি ছিল জেএমবি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহর মুক্তি।
তবে যারাই করে থাকুক, আইএস বা আল কায়েদা, এই ঘটনার পর আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি আছে। টার্গেট কিলিং থেকে জিম্মি করে হত্যা। একটি পর একটি পর্যায় অতিক্রম করে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে জঙ্গিরা। রাজধানীর গুলশানে যাদের হত্যা করা হলো তারা সবাই অত্যন্ত নিরীহ। শান্তিপ্রিয় কিছু মানুষ নিজস্ব সময় কাটাতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হলেন। আর বিদেশিরা, আমাদের অতিথি, আমরা তাদের এমন নির্মমভাবে হত্যা করলাম।
জিম্মি ঘটনার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ঐক্য দরকার। ঠিক এটাই এখন সর্বত্র উচ্চারিত শব্দ। বাংলাদেশকে বন্দি করতে উদ্যত অন্ধকারের শক্তি। সময় এখন সবটুকু শক্তি দিয়ে এদের মোকাবিলা করা। এদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন দল ও আদর্শের প্রতিযোগিতামূলক দ্বন্দ্ব ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আছে, আছে আদর্শের দ্বন্দ্বও। রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে আর ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া হয়। কিন্তু সে অবস্থান টিকেনি। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে উল্টোপথে যাত্রা করে দেশ। হয়ে উঠতে থাকে এক নতুন পাকিস্তান। পাকিস্তানপন্থিদের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সংবিধান সংশোধন করে ধর্মকেই করা হলো সবকিছুর অভিজ্ঞান। আর এ থেকেই সংকটের শুরু। দীর্ঘসময় পেরিয়ে সাধারণ ধর্মচর্চা আর থাকছে না, ধর্মকে ব্যবহার করে একটা গোষ্ঠী হয়ে উঠছে এমন খুনি। একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদশের্র গোষ্ঠী তৎপর বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তান বানাতে।
বাংলাদেশের নতুন করে আবার উদারতার পথে যাত্রা তাই বারবার আক্রমণের শিকার। দেশিয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র যেমন, তেমনি তাদের সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক যোগ দিয়েছে সেইসব আন্তর্জাতিক শক্তি যারা ১৯৭১-এ আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। অতীতে বাংলাদেশ এর চেয়ে বড় সমস্যা মোকাবিলা করে সফল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঐক্যের কথা বলেছেন। সত্যি তাই এখন বিভক্তি নয়, মহাশত্রু দমনে আদর্শিক রাজনীতির জাতীয় ঐক্য চাই। জনগণের শক্তিশালী প্রতিরোধ দরকার।
নিহত জঙ্গিদের যে পরিচয় পাওয়া গেল, তাও বিস্ময়কর। সবাই ভালো পরিবার আর ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। জঙ্গিবাদের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশে আজ ভাবতে হবে কেন আমাদের তারুণ্যের এমন মগজ ধোলাই কি করে হয় যে, তারা এমন সহিংস হয়ে ওঠে, তারা বিপথে চলে যায়? ধর্মান্ধ রাজনীতি যেমন সমস্যা, সমস্যা লুটেরা রাজনীতিও। এ নিয়ে আর রাজনীতি করার সময় নেই দেশের সামনে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক রাজনীতির ঐক্যই বিশ্বমানবতাবিরোধী এমন উগ্রশক্তিকে জনগণের শক্তিতে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
লেখক : পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন