ঈদ আনন্দে রোজার স্বার্থকতা
ডা. জাকির হোসেন
শেষ হয়ে যাচ্ছে মুসলিম ধর্মানুরাগীদের সবচেয়ে পবিত্র মাস, সংযমের মাস মাহে রমজান। রমজানের শেষে পালিত হয়ে থাকে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, ঈদুল ফিতর। মাহে রমজানের শুরু থেকেই এ দিনটির জন্য সমগ্র মুসলিম বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। সারা বছরের দুঃখকষ্ট আর বেদনাকে ভুলে বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজে দিনটি বিশেষ আনন্দঘন পরিবেশে উদ্যাপন করা হয়। ঈদ আসে ইবাদত আর মানবকল্যাণের বার্তা নিয়ে। সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সমাজকে ঐক্যের পথে, কল্যাণের পথে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করে এই ঈদ-উল-ফিতর। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দের এক অবর্ণনীয় পসরা সাজিয়ে আসে ঈদ। ছোট-বড়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে এক মহামিলনের সম্মেলন ঘটে পবিত্র এই ঈদ উৎসবে।
দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ এক সাম্প্রদায়িক সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে মিলেমিশে বাস করে আসছে। বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ এখন প্রায় সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে ভোগ করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মুসলমানরা ঈদ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থাপন হয় ঈদুল ফিতরের এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে।
ঈদ দেশের সকল ধর্মের মানুষকে একসূত্রে গ্রথিত করে। সামর্থবানরা ফিতরা, যাকাত, সদকার মাধ্যমে গরিবের হক আদায় করে ঈদুল ফিতরের সময়। অন্যদিকে ঈদগাহে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এক কাতারে নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলির মাধ্যমে স্থাপিত হয় সামাজিক সাম্য। বাংলাদেশের এই সামাজিক বন্ধন এখনও অন্যান্য মুসলিম জাহানের জন্য অনুকরণীয়। কিন্তু বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হলেও এখানে আজও ফিতরা, দান, সদকা বিতরণের সঠিক নিয়মকানুন রয়েছে কিনা, যদি থেকেও থাকে তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়, তা দৃশ্যমান নয়। যার ফলে, অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান এই সমাজের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ভাটা পড়েছে। ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনে ঈদ আনন্দ ছুঁয়ে যায় না। ঈদের দিনটাও দশটা সাধারণ দিনের মতোই আনন্দহীনভাবে কাটে।
মাহে রমজানের মূল শিক্ষা হলো, ত্যাগ। একমাস সিয়াম সাধনার পরও সেই শিক্ষার কতটুকু আমরা ব্যবহার করিÑ ঈদ উৎসবে। সামর্থবানেরা কী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুখে হাসি ফোটাতে প্রচেষ্টা চালাই? সেটা করলে কতটুকু? সামর্থবানদের বিবেকের কাছে এই জিজ্ঞাসা থাকল, ভেবে দেখবেন আশা করি। সব সংকীর্ণতা দূরে ঠেলে দিয়ে, উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ ভুলে জাতীয়ভাবে একসঙ্গে হাসিমুখে ঈদ উদ্যাপন করতে পারলে স্বার্থক হবে আমাদের সিয়াম সাধনা।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন