রংপুরের ফুটপাতগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়
রংপুর প্রতিনিধি : পবিত্র মাহে রমজানের শেষপ্রান্তে এসে পবিত্র ঈদুল ফিতরের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রংপুরের সর্বস্তরের মানুষ। নগরীর ফুটপাতগুলোতেও গভীররাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। অপেক্ষাকৃত কম দাম হওয়ায় সকল শ্রেণির ক্রেতারা ঝুঁকছেন ফুটপাতে। এভাবে প্রতিদিন রংপুর অঞ্চলে ঈদ উপলক্ষে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। রংপুর মহানগরীর পায়রা চত্বর, কাচারি বাজার, জাহাজ কোম্পানি, সিটি বাজার, সদর হাসপাতাল, সুরভী উদ্যান, স্টেশন আলমনগর, হনুমানতলা ইসলামপুর, সালেক মার্কেট, লালবাগসহ বিভিন্ন ফুটপাতে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই। ভ্যাপসা গরমেও নানা বয়সী ও নানা শ্রেণি পেশার মানুষের ভিড়ে ঠাসা এসব ফুটপাত।
এসব ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে- শাড়ি থেকে শুরু করে পায়জামা-পাঞ্জাবি, জিন্স, প্যান্ট, ফতুয়া, গেঞ্জি, থ্রিপিস, তৈরি পোশাক, শিশুদের পোশাক, টুপি, মানিব্যাগ, বেল্ট, জুতো, স্যান্ডেল, আতর, সুরমা, প্রসাধনীসামগ্রী, সেমাই, তেল, লবণ থেকে ঈদের প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ। আছে বাহারি ডিজাইন ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র। ফুটপাতের এসব মার্কেটে দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত দাম কম হওয়ায় এখানকার ক্রেতার তালিকায় যোগ হয়েছে বিত্তবানরাও। তবে অধিকাংশই দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক ও নিম্ন, মধ্য ও নির্ধারিত আয়ের মানুষ।
নগরীর লালকুঠি এলাকার গৃহবধূ সাদিয়া সুলতানা জানান, স্বামী কলেজে চাকরি করেন। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় বছর পাঁচেক থেকে ফুটপাতেই ঈদের কেনাকাটা করি। একটু দেখেশুনে নিলে দাম কম পাওয়ার পাশাপাশি ভালো জিনিসও পাওয়া যায়।গৃহবধূ আমেনা বেগম জানান, সব জিনিস এখানে সাশ্রয়ী দামে কেনা যায়, তাই আসা। বিশেষ করে বিছানার চাদর দোকানে একটি কেনার টাকা দিয়ে এখানে ৩টি কেনা যায়। আরেক ক্রেতা হারুনুর রশিদ সোহেল বলেন, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে একটা কাজও করি। বাবার হাতের অবস্থাও তেমন ভালো না।
টাকা আমাকে দিয়েছে সেটি দিয়ে যদি বড় দোকানে গিয়ে পোশাক কিনি, তবে একটি হবে। আর এখানে একসঙ্গে একই টাকা দিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি ও জিন্সের প্যান্টশার্ট কিনলাম। ফুটপাতের বেচাকেনা নিয়ে দোকানিরা খুবই সন্তুষ্ট। বড় বড় বিপনী বিতানগুলোতে দোকানভাড়া বেশি হয়। কর্মচারী বেশি লাগে। হাইফাই ডেকোরেশন করতে হয়। কিন্ত ফুটপাতে এসবের বালাই নেই। তাই দাম একটু কম পাওয়া যায়।
নগরীর সিটি বাজারের সামনের ফুটপাত ব্যবসায়ী আলম রায়হান মিজান জানান, গতবছরের চেয়ে এবার দাম বেশি হলেও ব্যবসা ভালো হচ্ছে। ফুটপাতে এখন আর শুধু গরিব মানুষ আসে না।
আরেক বিক্রেতা চাঁদ মিয়া বলেন, ফুটপাতে জিনিসের দাম কম হওয়ার পেছনে মূল কারণ, আমরা কম লাভ করি, সেল বেশি করি। আমাদের তো স্টক করে রাখার কোনো জায়গা নেই। ফলে ঈদ আসলে আমরা ভালোই লাভ করি।
রংপুর মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ঈদে আমরা দোকান মালিকরা ফুটপাত ব্যবসায়ীদের ছাড় দিচ্ছি। এতে করে তারা লাভবান হচ্ছে এবং কম আয়ের লোকজনও ঈদের কেনাকাটা ভালোভাবে করতে পারছেন।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, মানুষ যাতে ঈদ উৎসবে ভালোভাবে কেনাকাটা করে ঘরে ফিরতে পারে সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত নগরী এবং নগরীর বাইরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি, ঘটবেও না।