ঈদে লঞ্চযাত্রীদের চাপ কমলেও ট্রেনে-বাসে ছিল উপচে পড়া ভিড়
রফিক আহমেদ : রাজধানী সদরঘাট টার্মিনালে গতকাল সোমবার সকালে কয়েকদিনের তুলনায় যাত্রী বাড়লেও ঈদের তুলনায় ভিড় তেমন ছিল না। তবে কমলাপুর ট্রেনে এবং সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার টানা নয়দিন ছুটি থাকায় অন্যান্য ঈদের মতো যাত্রীদের চাপ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) সৈয়দ মাহফুজুর রহমান বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ৪০টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গত রোববার ছাড়ে ১০৫টি লঞ্চ। যাত্রীর তেমন চাপ না থাকার কারণ জানতে চাইলে এক লঞ্চমালিক বলেন, সদরঘাট থেকে বরিশাল যাচ্ছে ১৭টি লঞ্চ ; পটুয়াখালী ও ভোলা যাচ্ছে আটটি করে। অন্যান্য রুটে একাধিক লঞ্চ রয়েছে। তাই এখন যাত্রীর তেমন চাপ দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে ঈদযাত্রার লঞ্চযাত্রীদের নিরাপত্তায় ‘জোরদার ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলা হলেও নানা বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে টার্মিনালে। পন্টুনে বসেছে নানা ধরনের ফলের দোকান।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক (প্রশাসন) গুলজান আলী বলেন, উঠিয়ে দেওয়ার পর তারা আবার বসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, অর্থের বিনিময়ে হকারদের পন্টুনে বসতে দেওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসলে অভিযানে তাদের উঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা চলে গেলেই ফের পন্টুনে বসে পড়েন হকাররা।
যাত্রীদের নির্বিঘেœ গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাওয়ার জন্য ‘সব ধরনের’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে সদরঘাটের ১৪টি প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে ১৪টি সিসি-টিভি। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধায় ৪,২০০ বর্গফুট পার্কিং স্পেস বাড়ানো হয়েছে। চাঁদপুর ও বরিশালের ‘ডে-সার্ভিসের’ যাত্রীরা এখন থেকে লালকুঠির ঘাট দিয়ে যাবেন।
এর ফলে সদরঘাটের মূল পন্টুনে যাত্রীর চাপ কমে যাবে বলে আশা করছেন তারা। সারাদেশে ৪১টি নৌ-রুট আছে এবং লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি।
গত বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে ঈদের ‘স্পেশাল সার্ভিস’ শুরু হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ বরকত উল্ল্যাহ।
তিনি বলেন, গতকাল সদরঘাট থেকে দুটি স্টিমার মোড়েলগঞ্জ ও হুলারহাট যাবে। ১০ জুলাই পর্যন্ত এই বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।
এদিকে, স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষরা ছুটছেন।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে আগের দিনের চেয়ে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
বাসের টিকেট পাওয়া গেলেও দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীদের কেউ কেউ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পরিবহন মালিকরা বলেছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছেন তারা।
কমলাপুরে নতুন করে কোনো টিকেট দেওয়া হচ্ছে না, যারা যেতে নাছোড়বান্দা তাদের ‘স্ট্যান্ডিং টিকেট’ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সব ট্রেনেই সময়মতো ছেড়ে গেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
সকাল ৯টায় রংপুরের পথে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেসের ভিতরে দাঁড়ানোর কোনো জায়গা না থাকায় যাত্রীদের ছাদে উঠতে দেখা যায়। নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের নামিয়ে দিলেও ঠিকই ট্রেন ছাড়ার সময় আবার উঠেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোল্লা আমজাদ ও সৈয়দ রেজাউর রহিম যাবেন রংপুরে, সকালে এসে স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটেছেন।
আমজাদ বললেন, ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়েই থাকতে হবে। তাতেও আপত্তি নাই, বাড়ি যেতে পারব এটাই বড় কথা।
সকাল ৭টায় উম্মুল ওয়ারা নামে একজন সংবাদকর্মী চট্টগ্রামের পথে ছেড়ে যাওয়া সোনার বাংলায় উঠেছেন, সঙ্গে রয়েছে তার ছয় বছর বয়সী সন্তান।
কমলাপুর স্টেশনে নিরাপত্তার বেশ কড়াকড়ি দেখা যায়। রেলওয়ের নিয়মিত নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আর্মড পুলিশরাও দায়িত্ব পালন করছেন। টিকেট ছাড়া প্লাটফর্মে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, যাত্রীদের দেহও তল্লাশি করা হচ্ছে।
রাজধানীর সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোনো পরিবহনেরই অগ্রিম টিকেট না দেওয়ায় বাস ধরতে আসা যাত্রীদের টিকেটের জন্য কাউন্টারগুলোতে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।
এখান থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং দক্ষিণাঞ্চলের কিছু গন্তব্যের বাস ছাড়ে। টিকেটের দাম বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল হোসেন যাবেন কুমিল্লা, উইনার পরিবহনের টিকেট কেটেছেন। তিনি বলেন, আগে সব সময় ভাড়া নিত ১৮০ টাকা, এখন নিচ্ছে ৩০০ টাকা।
তবে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর বাসের ভাড়া আগের মতোই নেওয়া হচ্ছে জানালেন বেশ কয়েকজন যাত্রী।
সায়দাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, সেহরির পর থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত যাত্রীর বেশ চাপ ছিল। এরপর তেমন চাপ নাই। সমিতির পক্ষ থেকে জোরদার তদারকি থাকায় কেউ বেশি ভাড়া নিচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম