‘মাথার উপর শন শন গুলি, ঝাঁপ দিলাম ২৫ ফুট নিচের ছাদে’
ডেস্ক রিপোর্ট : ‘ততক্ষণে পুলিশ আমাদের রেস্তোরাঁটাকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে। ওরাও তখন বুঝে গিয়েছিল, এবার লড়তে হবে শেষ যুদ্ধটা। সেই সময় ওরা এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে করতে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিল। দেখলাম, ডিনার টেবিলে বসা এক ইতালিয়ের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে এক জঙ্গি। গুলি ছুটে আসছে নানা দিক থেকে। একটা গুলি তো আমার মাথার ঠিক উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। মেঝোয় শুয়ে পড়লাম প্রথমে, বাঁচতে। কিন্তু শুয়ে শুয়েই ভাবলাম, এভাবে কতক্ষণই বা বাঁচতে পারব! কারণ, ওরা মেঝেতে মরার মতো পড়ে থাকলেও তো ছেড়ে দেবে না। কাছে এসে গায়ে হাত দিয়ে দেখবে, বেঁচে আছি কি না। তার পর যদি দেখে, কেউ বেঁচে আছে, তাহলে তাকে গুলি করে বা তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে মারবে।’
তখনও উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছিলেন গুলশনের ঘটনা। জাকোপো বিওনি। ওই রেস্তোরাঁর যে দুই ইতালীয় শেফ পালিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের একজন এই বিওনি। গত শুক্রবার কীভাবে পালিয়েছিলেন ওই রেস্তোরাঁ থেকে, একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তা সবিস্তারে জানিয়েছেন বিওনি। আনন্দবাজার পত্রিকা
তার কথায়, বাঁচার জন্য আমাদের রেস্তোরাঁর পিছনের সিঁড়ি দিয়ে ছুটে ছাদে উঠে গিয়েছিলাম। ছাদে উঠে দেখলাম, নিচে রেস্তোরাঁর সামনে পুলিশের সঙ্গে কার্যত খ-যুদ্ধ চলছে জঙ্গিদের। গুলি, গ্রেনেড ছুড়ছে জঙ্গিরা। পাল্টা গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। ছাদে উঠে ভাবছিলাম, কোন দিকে যাব? ছাদ থেকে কোন দিকে লাফ মারব? দেখলাম, রেস্তোরাঁর পিছন দিকে গলির মধ্যে একটা বাড়ি আছে। তার ছাদে লাফিয়ে পড়া যায়। কিন্তু ওই বাড়িটা ছিল প্রায় ২০/২৫ ফুট নিচে। মানে, ঝাঁপ দিয়ে দুটো তলা নিচে নামতে হবে। কয়েক মিনিট ভাবলাম। যদি কোমরের হাড়গোড় ভেঙে যায়! পরে ভাবলাম, গেলে যাবে। গুলি বা চাপাতির কোপ খেয়ে তো মরতে হবে না! এই ভেবেই ঝাঁপ দিয়ে নামলাম রেস্তোরাঁর পিছনের দিককার ওই বাড়িটার ছাদে। সেখানেই ছিলাম বহুক্ষণ। গুলিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ লুকিয়ে ছিলাম ওই বাড়িটাতে, ভয়ে। যদি পরে চোরাগোপ্তা রেস্তোরাঁ থেকে কেউ বেরিয়ে এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে!
বিওনি বলে চলেন, আমাকে তো লাফিয়ে বাড়িটার ছাদে নামতে দেখে খুব হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বাড়িটার লোকজন। ভয় পেয়ে ওই বাড়ির দুটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল। তার পর ওরা সব কিছু বুঝতে পেরেছিলেন। তখন ওরাই আমাকে ওদের ঘরে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে যতœ করে আমাকে খাইয়েও ছিলেন। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলাম। একবার পুলিশ এসে ওই বাড়িতেই আমার খোঁজখবর নিয়ে গেল। আর তখনই ঠিক করে ফেললাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই বাড়ি ছেড়ে আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে। না হলে আরও কত পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হবে আমাকে, কে জানে! আর আমার জন্য ওই বাড়ির লোকজনকেও থাকতে হবে দারুণ দুশ্চিন্তায়। যেই ভাবা, সেই কাজ। আমার সঙ্গে ছিল দুটো ব্যাগ আর একটা পাসপোর্ট। তাই নিয়েই পড়িমড়ি করে ছুট লাগালাম এয়ারপোর্টের দিকে। দেরি না করে চেপে বসলাম ব্যাঙ্ককগামী প্রথম ফ্লাইটেই।
বাড়ি ফেরার জন্য আর তর সয়নি বিওনির। গতকাল সোমবারই ব্যাঙ্কক থেকে রওনা হয়ে গিয়েছেন ইতালিতে।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী