ঈদে আনন্দমুখর ঢাকায় নিস্তব্ধ গুলশান
ইয়াছিন রানা : ঈদে আনন্দমুখর ঢাকায় জমজমাট আবাসিক ও কূটনৈতিক এলাকা গুলশান যেন একটি নীরব নিস্তব্ধ আবাসিক পার্ক। চারদিকে বড় বড় বাড়িঘর কিন্তু নেই মানুষ জন, নেই গাড়ির হর্নের আওয়াজ। স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর গুলশানে নেমে আসে শোকের ছায়া। ঈদের মধ্যেও এই নীরবতাকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি গুলশান।
ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পর দিন ঢাকা উত্তরের প্রাণকেন্দ্র গুলশানের যখন এই অবস্থা তখন সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তরের অন্যসব এলাকা। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল বিনোদনপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়। শাহবাগের শিশুপার্ক, আগারগাঁওয়ে সামরিক জাদুঘর, বিমানবাহিনী জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।
এসব বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও ধানম-ি পার্ক, হাতিরঝিল, কালশী ফ্লাইওভারের রাস্তা, আশুলিয়া বেড়িবাঁধ, উত্তরার দিয়াবাড়ি, ভাটারার একশ ফিট রাস্তা দিয়ে বেরাইদ নদীর পাড়, উত্তরখান নদীর পাড়, আশিয়ান সিটি, কুড়িলের তিনশ ফিট রাস্তা দিয়ে পূর্বাচলে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। তবে সব স্থানেই দর্শনার্থীর মনে সন্ত্রাসী হামলার সামান্য আশঙ্কা উঁকি দিলেও ঈদের আনন্দ আর উপচেপড়া ভিড়ে সেই আশঙ্কা চাপা পড়ে গিয়েছে।
হৃদয় নামে এক যুবকের সাথে কথা হলে সে বলে, ঈদের দিন আমরা বন্ধুরা মিলে বাইক রেস করেছি, এছাড়া দিয়াবাড়ি, আশুলিয়া বেড়িবাঁধ, তিনশ ফিট রাস্তায় ঘুরেছি। সব জায়গায়ই অতিরিক্ত মানুষ ছিল তাই এবার বেশিক্ষণ এক জায়গায় থাকি নাই।
আর অন্যদিকে গুলশানে ঈদের দিন নামাজের সময় বাদে আগের দিন ও পরের দিন সুনসান নীরব। যে কয়জন মানুষের দেখা মিলেছে তাদের মধ্যে গুলশানের বাসিন্দাদের সংখ্যা খুবই কম। মানুষের মধ্যে পুলিশের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, এছাড়া বাকিরা গুলশানের মধ্য দিয়ে অন্য কোথায় যাচ্ছেন এমন। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল আর বাসের দেখা মিলেছে, রাস্তায় দেখা মেলেনি রিকশার। এদিকে গুলশানের হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ দেখা গেছে। পুলিশের চেক পোস্টের কারণে অনেক গাড়ি এই রাস্তা এড়িয়ে চলছে এখন।
জানা গেছে, গুলশানের বাসিন্দারা ঈদে ঘুরতে গেছেন ঢাকার অন্য বিনোদন এলাকাগুলোতে এবং ঢাকার বাইরে। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঈদের দিন উত্তরার দিয়াবাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন সামিউল আরফান। তিনি বলেন, হোটেলে হামলার পর থেকে সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বের হইনা এখন, বাবা-মাও খুব টেনশন করে। তাই এবার ঈদের ভয়ে গুলশানের কোনো চাইনিজ রেস্তোরাঁ বা হোটেলে যাইনি। আমার পরিচিতদের বেশির ভাগই গুলশানের বাইরে ঘুরতে বেড়িয়েছেন।
গুলশানে আবুল হাশেম নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে গুলশানে রিকশা চালাই, কিন্তু এবারের ঈদের মত কখনও দেখিনি। আমাদের রিকশা চালকদের মধ্যে বেশির ভাগই ঈদে গুলশানে রিকশা চালায়নি কারণ কোনো যাত্রী নাই। আগে রাত এগারোটা পর্যন্ত রিকশা চালাতাম কিন্তু হোটেলে হামলার পর সন্ধ্যা হলেই আর যাত্রী পাই না। তাই যাত্রীর অভাবে বেশির ভাগ রিকশাচালক এই এলাকায় রিকশা চালাতে আসে না। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি