নিখোঁজ ১০ বাংলাদেশি যুবক ভারতে!
আবু সাইদ : গুলশানের অভিজাত এলাকায় হলি আর্টিজান বেকারি রেস্টুরেন্টে জঙ্গিহামলার পর কেটে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ। আর এ হামলার সঙ্গে জড়িতরা কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপরই নিখোঁজ আরও বেশকিছু যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের ফেরার আহ্বান জানান অভিভাবকরা। ওই নিখোঁজ যুবকদের মধ্যে ১০ জনের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে তারা ভারতেই রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এসব নিখোঁজ যুবকদের পাসপোর্ট নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই নিখোঁজদের খোঁজে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের মেহেদিপুর, হাবিবপুর, হিলি, চাংরাবান্ধাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছে দেশটির বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম।
নিখোঁজরা হলেনÑ ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর ই ১০৪৭৭১৯), আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর ৫২৫৮৪১৬২৫); চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী; সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর এল ০৬৩৩৪৭৮), মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর টিকে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর বিই ০৯৪৯১৭২); লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর এফ ০৫৮৫৫৬৮)।
আর এ তথ্য পাওয়ার পরই ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে কঠোর নজরদারী শুরু করেছে বিজিবি ও বিএসএফ । ইতোমধ্যেই বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজখবর নিতেও শুরু করেছেন। কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখতে পেলেই পুলিশ বা বিএসএফকে জানাতে বলা হয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে তেমন একটা মুখ খুলছে না ভারতীয় বাহিনী। মুখ খুলতে রাজি হননি মালদা জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অবশ্য তিনি এ বিষয়ে কিছুটা আঁচ দিয়েছেন। এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি অনেক বড় বিষয়। এ নিয়ে আমার কিছু বলা উচিত হবে না।’
তিনি বলেন, ‘গুলশানে হামলার পর অবশ্য জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। জেলার সব হোটেল, লজ, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন জাতীয় সড়কেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’
এদিকে গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে দেশি-বিদেশি লোকজনকে জিম্মি করে। পরে তারা ২০ জনকে ধারালো অস্ত্রে আঘাত ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এই ‘হামলাকারীদের’ ছবি সাইট ইন্টেলিজেন্স প্রকাশ করার পর তাদের সঙ্গে মিল দেখে পরিচিতজনরা পুরনো ছবি পাশাপাশি রেখে শেয়ার করতে থাকে।
এর মধ্য দিয়ে পাঁচ হামলাকারীরই পরিচয় জানা সম্ভব হয়, যাদের মধ্যে স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র রোহান ইমতিয়াজ ও বর্তমান ছাত্র মীর সামেহ মুবাশ্বের এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নিবরাস ইসলাম গত কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল বলে পরিবারের ভাষ্য।
অপর দুই হামলাকারী বগুড়ার ধুনটের শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের মো. খায়েরুজ্জামানও কয়েক মাস ধরে পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিলেন বলেও তাদের স্বজনরা জানান। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর জেলার আর কোনো যুবক নিখোঁজ আছেন কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন।
এদিকে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও পরিবারের কোনো সদস্য নিখোঁজ থাকলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে তা জানাতে অনুরোধ করেন।
এর মধ্যেই গত ৫ জুলাই সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকা থেকে ‘হুমকি বার্তা’সম্বলিত ‘আইএসের’ ভিডিওতে তিন বাঙালি তরুণকে দেখা যায়। এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তিন বাঙালি তরুণের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শাফি বলে শনাক্ত করেছেন তার পরিচিতজনরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক জন ‘নিশ্চিত’ করেছেন ওই তরুণই বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সঙ্গীতবিষয়ক একসময়ের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ক্লোজআপ ওয়ানের তাহমিদ। আরও একজনকে শনাক্ত করেছেন তাদের পরিচিতজন। তার নাম তৌসিফ হাসান বলে জানিয়েছেন তারা। বাংলামেইল