এম রবিউল্লাহ : ইরাক যুদ্ধের ১৩ বছর পর ওই যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অপরিণামদর্শী ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চিলকট। গত বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে দায়ী করা হয়েছে। ফলে ব্লেয়ারকে আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন আইনজীবীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক পথ থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার সরকার গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সামরিক আগ্রাসনে গিয়েছে যা সঠিক ছিল না। নিহত সৈন্যদের পরিবার ইরাকে সামরিক আগ্রাসনের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে আইনের কাঠগড়ায় নিতে পারবে।
২০০৩ সালে নিহত হওয়া সায়মনের বাবা জন মিলার পুত্রসন্তানের বিচার দাবি করেন। তিনি ব্লেয়ারকে কাঠগড়ায় দেখতে চান। ২০০৫ সালে নিহত ৪২ বছর বয়সি গ্যারি নিকলসনের মা তার পুত্র হত্যার বিচার দাবি করেন। টনি ব্লেয়ার তার হাতে রক্ত ধরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিকলসনের মা।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের সম্মুখীন হতে হবে। তবে সৈন্যদের বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাদ্দাম হোসেন সন্দেহাতীতভাবে একজন অত্যাচারী একনায়ক শাসক ছিলেন। তিনি অযথা নিজের প্রতিবেশী দেশের উপর আক্রমণ করেছেন। নিজের দেশের শত শত মানুষকে তিনি হত্যা করেছেন। এ অপারধের জন্য নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। অনেক শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সামরিক পদক্ষেপই সর্বশেষ পথ ছিল না।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, ইরাকে তিনটি মিলিটারি ব্রিগেড নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে ঝুঁকি যাচাই করা হয়নি। ফলে যুদ্ধের উপকরণের ঘাটতি পড়ে। সুস্পষ্ট সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও আক্রমণের ফলাফলকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল।
চিলকট তদন্ত কমিশন ‘দি ইরাক ইনকোয়ারি’ নামে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে ২৬ লাখ শব্দে।
ইরাকে সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বেশকিছু চিঠির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই নেতার মধ্যে ২৮টি চিঠির আদান প্রদান হয়েছিল ইরাকে আগ্রাসনের আগে। চিলকট প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
টনি ব্লেয়ারকে বিশ্বের নিকৃষ্ট সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সেনাদের পরিবারের সদস্যরা। চিলকট প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য প্রতিটি পরিবারকে ১৮০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। অধিকতর ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগ পাবেন ভিকটিমরা। এমনকি ব্লেয়ারকে তার দল বহিষ্কারের চিন্তাভাবনা করছে ইতোমধ্যে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
ডেইলি মেইল, মিরর, দ্য গার্ডিয়ান।