রোজায় আইএস জঙ্গিদের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস, নিহত ৮শ
রাশিদ রিয়াজ : এবার রমজানে বাংলাদেশ, ইরাক, জর্ডান, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কে আইএস জঙ্গিদের ধারাবাহিক সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞে অন্তত ৮শ মানুষ নিহত হয়েছে। সিএনএন ও ডেইলি মেইলে এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার সপ্তাহের এ সন্ত্রাসী অভিযানে এসব দেশে প্রাণ হারিয়েছে ৮ শতাধিক মানুষ। ঢাকার গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ, ইরাকে ফালুজায় মসজিদে, ইস্তাম্বুলে বিমানবন্দরে, যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর গে নাইট ক্লাব, লেবানন সিরিয়া সীমান্তের একটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত গ্রামে, ইয়েমেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল শহর মুকাল্লায় ও জর্দান সিরিয়া সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব হামলা চালায় আইএস জঙ্গিরা।
গত মে মাসের শেষদিকে আইএস জঙ্গিদের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানি এক অডিওটেপে রমজানে এধরনের ধারাবাহিক হামলার ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় আদনানি আইএস জঙ্গিদের রমজান মাসকে বিজয় ও জিহাদের মাস হিসেবে উল্লেখ করে এ মাসকে দুনিয়াব্যাপী অবিশ্বাসীদের জন্যে চরম দুর্দশায় পরিণত করার আহবান জানান।
আদনানির এ ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে জঙ্গিরা। রমজানের প্রথম দিনেই ইরাকের মসুল শহরে আইএস জঙ্গিরা ৬৫ জনের শিরñেদ করে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন ও সিরিয়া সীমান্তের একটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত গ্রামে আইএস জঙ্গিদের হামলায় ৫ ব্যক্তি মারা যায়। এরপর ইয়েমেনের মুকাল্লা শহরে আত্মঘাতী এক বোমাহামলায় মারা যায় ৪০ জন। জর্ডান ও সিরিয়া সীমান্তে আরেক আত্মঘাতী হামলায় জর্ডানের ৭ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। এরপর ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তিন আত্মঘাতী হামলায় মারা যায় ৪৪ জন। ঢাকায় গত শুক্রবার রাতে গুলশান হত্যাকা-ে ৬ বন্দুকধারীসহ মারা যায় ২৮ ব্যক্তি। এরপর ইরাকের বাগদাদে আরেক হামলায় দুইশতাধিক ব্যক্তি মারা যায় যাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন শিশু। যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোতে গে নাইট ক্লাবে জঙ্গি হামলায় মারা যায় ৪৯ জন। এর পরের দিন প্যারিসের অদূরে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা। গত ১১ জুন সিরিয়ার একটি শিয়া মাজারে আইএস জঙ্গি হামলায় ২০ জনকে হত্যা করা হয়।
সিএনএনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার বার্জেন তার প্রতিবেদনে বলেন, আইএস জঙ্গিরা এমন এক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এধরনের সন্ত্রাসী হামলা করছে যখন সারাবিশ্বের মুসলমানরা রোজা রাখছে ও বিশেষভাবে এবাদত পালন করছে। ২৭ রমজান মুসলমানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় এজন্যে যে নবী (সা:)-এর ওপর কুরআন নাযিল হয়। দুর্ভাগ্যবশত এদিন রাতেই ঢাকায় আইএস জঙ্গিরা স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় যখন বাংলাদেশের মানুষ শবে কদরে এবাদত পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এবং একই রাতে ইরাকের ফালুজায় মসজিদে নামাজরত মানুষের ওপর হামলা চালায় আইএস জঙ্গিরা।
ডেইলি মেইলের সাংবাদিক ফ্লোরা ডুরি তার এক প্রতিবেদনে বলছেন, এই রমজানের প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩০ জন মানুষ আইএস জঙ্গিদের হামলায় হতাহত হয়েছে। তিনি বলছেন, রমজানে গত চার সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে আইএস জঙ্গি হামলায় ৮ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। রমজান শুরুর ঠিক পূর্বে গত মে মাসের শেষদিকে আইএস জঙ্গিদের প্রতি আদনানীর ওই ঘোষণাকে এসব হতাহতের জন্যে ফ্লোরা দায়ী করছেন। তিনি এও বলছেন, সারাবিশ্বে শান্তিপূর্ণ মুসলমান আইএস জঙ্গিদের এধরনের হত্যাযজ্ঞকে কখনই সমর্থন করে না। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ফাওয়াজ এ জার্জেস বলেন, আইএস জঙ্গিদের মতো অতীতে আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা রমজানে এধরনের হত্যাকা- চালিয়েছে।
এদিকে নিউজ উইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলছে রমজানে আইএস জঙ্গিদের হাতে বিভিন্ন দেশে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।