জঙ্গি সমস্যা সমাধানে হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে : খালেদা জিয়া
কিরণ সেখ : দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন করতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঈদের কুশল বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে কূটনীতিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি আবর, জাপানের রাষ্ট্রদূত মাশাতো ওয়াতানাবে, ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনসহ ২২টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বেগম জিয়া। এরপর কূটনীতিকদের সেমাই-জর্দাসহ বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনা ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারে নাই। ঢাকা শহরসহ যে সব জেলায় যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে জড়িত কোনো অপরাধীকে তারা (সরকার) ধরতে পারে নাই। কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা অনেক আগেই বলেছি, এ সরকার প্রথম থেকেই ব্যর্থ। এখন ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের উচিত একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সরে যাওয়া।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জিম্মিদের উদ্ধারে সরকার বিলম্বে অভিযান পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, বিলম্বে কেন অভিযান শুরু হলো? ভোরে কেন অভিযান হলো? টেলিভিশনে যা দেখলাম, পুলিশের বড় বড় অনেক কিছু দেখাল। র্যাব ছিল, কেউই কিছুই করতে পারেনি। শেষে আর্মির কমান্ডোকে এনেছে ভোরে। তারা যখন গেছে, তখন তো মরে গেছে, তার আগে সব ঘটনা শেষ হয়ে গেছে। এত দেরি কেন? এত দেরিতে কেন সে কাজটি করা হলো? এটা মানুষের প্রশ্ন।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের কাছে বিস্ফোরণ এবং গুলির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শোলাকিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়, অত্যন্ত খারাপ। প্রতিটি মানুষ আজকে ভয়ের মধ্যে, আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, গুলশানের ঘটনার পর সারা ঢাকা শহর থমথমে হয়ে গিয়েছিল, চলাচলের গাড়ি-ঘোড়া, মানুষজন কিছুই দেখা যায়নি, ভূতুড়ে নগরীর মতো হয়েছিল। নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলার পেছনে গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি থাকার অভিযোগও করেন তিনি।
এসময় উগ্রবাদ মোকাবিলায় আবারও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সকলে মিলে দেশের ওপর যে একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করা দরকার। এসময় মুসলিম উম্মাসহ দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের ঈদ শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া।
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিয়ম শেষে প্রথমে শেরে বাংলানগরে স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও পরে বনানীতে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেন খালেদা জিয়া। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম