দেশজুড়ে জঙ্গিহামলা আতঙ্ক
আজাদ হোসেন সুমন : রাজধানী ঢাকার গুলশানে আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ার ঈদগাহের অদূরে জঙ্গিহামলার পর দেশজুড়ে নাগরিকদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গুলশান হামলার রেশ না কাটতেই ঢাকার একটি শপিংমলের নাম উল্লেখ করে সেখানে হামলার ঘোষণা দিয়েছে আইএস। এ ধরনের জঙ্গি হামলা ভবিষ্যতে আরও হবে এমন ভিডিও বার্তাও অনলাইনে গত বুধবার প্রকাশ করেছে এ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনটি। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে জঙ্গিরা যেকোনো স্থানে হামলা চালাতে পারে এ আশঙ্কার কারণেই জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে নানা কথা ভাবছে। হাট-বাজার টার্মিনাল তথা অপেক্ষাকৃত জনসমাগমস্থলে যেতে মানুষ অনেকটাই ভয় পাচ্ছে।
সাম্প্রতিক দুই জঙ্গিহামলার পরে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলা নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঈদের আমেজ না কাটায় রাজধানী এখন অনেকটাই ফাঁকা। পুলিশ সদস্যরা আছেন নগর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে। গুলশানে ও শোলাকিয়া হামলায় পুলিশের ৪ কর্মকর্তা নিহত ও ২৬ জনের মতো আহত হওয়ায় পুলিশ সদস্যরাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তাদের পরিবারবর্গের পক্ষ থেকেও দায়িত্বরতদের বার বার সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে গুলশান হামলার পর থেকে ঢাকাস্থ সকল বিদেশি দূতাবাস তাদের দেশের নাগরিকদের সব ধরনের ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকদের সকল অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। কূটনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সকল ধরনের কর্মসূচি এমনকি আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলোর সভা-সেমিনারও বর্জন করতে বলেছে। পাশাপাশি মার্কিন নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে খোলা যানবাহন যেমন- খোলা জিপ, মোটরসাইকেল, সাইকেল ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে। শুধু গাড়ি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। মানুষের ভিড় জমে এমন এলাকা এড়িয়ে চলতে বলেছে। এমনকি শপিংমলকে এড়িয়ে যেতে বলেছে দূতাবাসটি। অন্যান্য দূতাবাসগুলোও এমন নির্দেশনা দিয়েছে। জাপান দূতাবাস যেকোনো বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে যেসব জাপানি নাগরিক রয়েছে, তাদের চলাচলে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এ হামলার পরে আতঙ্কে অনেক বিদেশি নাগরিক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। যাদের বিশেষ কাজ রয়েছে বা কাজসূত্রে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তারাও চিন্তা করছেন এদেশ থেকে অন্য কোথাও চলে যেতে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব আছে বলে সরকারকে বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছিল বিদেশি দূতাবাসগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত ২৭ এপ্রিল বৈঠক করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে আইএস আছে একথা সরকারকে বিশ্বাস করতে হবে। জুলহাজ মান্নান হত্যার তদন্ত বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে বার্নিকাট এ কথা বলেছিলেন। বার্নিকাট আরও বলেছিলেন, অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ এদেশে আছে। তবে বার্নিকাটের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আইএস-এর নাম ভাঙিয়ে এদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোই এসব কাজ করছে। এর আগেই আইএস ঘোষণা দিয়েছিল রমজান মাসে তারা বাংলাদেশে শাখা খুলবে। তাহলে কি জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়েই তারা জানান দিল বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব আছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহত জঙ্গিরা সবাই বাংলাদেশি। এই হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কোনো যোগাযোগ নেই। গতকাল শনিবার আইজিপি একেএম শহীদুল হক সরকারের অনড় অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, গুলশানে ও শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা আইএস নয়, বাংলাদেশি জঙ্গি জেএমবি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম