শিগগিরই বিশেষায়িত বাহিনী সরকার এখনই কিছু করে দেখাতে চায়
দীপক চৌধুরী : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে দেশি-বিদেশি নাগরিক জিম্মি করা এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কয়েকশ গজের মধ্যে জঙ্গি হামলা সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে সরকার ভারতের সিকিউরিটি গার্ড ‘ব্ল্যাক ক্যাট’-এর আদলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বিশেষায়িত বাহিনী তৈরি করবে বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় দেশ-বিদেশে নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত সরকার অচিরেই কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে। এরমধ্যে কলেজপড়–য়া ছেলেদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী ‘কানেকশনের’ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও গাফিলতি বা অবহেলার কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিরা মনে করেন, দুটি ঘটনাকে সরকার দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করলেও পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, জঙ্গিদের সন্ত্রাসী পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলা করার মতো বিশেষায়িত বাহিনী কী আছে? তা নেই বলেই দ্রুততার সঙ্গে হলি আর্টিজানের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। যদিও তড়িঘড়ি করে জিম্মিদের উদ্ধার করতে গেলে ক্ষয়ক্ষতির দায় তাদের ঘাড়ে এসে পড়তে পারত বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কথা থেকে এমন ধারণা পাওয়া যায়।
সূত্রমতে, এটি সরকারের শীর্ষমহল বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেনÑ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কাজটি পরিকল্পিত। ‘সোয়াত’, র্যাব-এর মতো এলিট ফোর্স থাকলেও অপারেশন দ্রুত করা সম্ভব হয়নি। কারণ, সরকার বিশেষ কোনো ‘ঝুঁকি’ নিতে রাজি হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছিল না আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর। একারণেই গুলশানে জঙ্গিহামলায় গভীর রাতে অভিযান পরিচালনার জন্য সিলেটে অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে তলব করা হয়। তাদের বিশেষ বিমানে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে গুলশানের আবাসিক এলাকা থেকে সকল খাবার হোটেল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
আরেকটি সূত্র জানায়, সরকার নিশ্চিতভাবেই বুঝেছেÑ জাপান ও ইতালির নাগরিকদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্ব স্তম্ভিত। বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্বপরিম-লে যে ‘নেতিবাচক’ ধারণাটি তৈরি হয়েছে তা দূর করতে সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। এ পরিস্থিতিতে সরকার কার্যকর কিছু ব্যবস্থা নিতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে অচিরেই গড়ে তোলা উন্নতবিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় আধুনিক বিশেষায়িত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত ২০ জনের মধ্যে চারটি দেশের নাগরিক রয়েছেন। এর মধ্যে জাপানের সাত জন, ইতালির নয় জন, ভারতের এক জন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া এক জন বাংলাদেশিও রয়েছেন নিহতদের মধ্যে।
দেশগুলোর আগ্রহের বিষয়ে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান শনিবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে বাংলাদেশের চৌকস, প্রতিভাবান পুলিশ কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তাদের বিদেশি প্রশিক্ষণ রয়েছে। তারা হাইলি কোয়ালিফাইড।
পুলিশ কমিশনারের মতে, কিছু রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য, যেমন ল্যাব পরীক্ষা, এ ধরনের টেকনোলজির আমাদের অভাব রয়েছে। সেই ধরনের পরীক্ষার জন্য কেমিক্যাল এক্সামিনের রিপোর্ট যেখানে ভালো হয় অর্থাৎ সিঙ্গাপুর, ভারত বা ইউএসএ, সেখানে আমরা এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছি। অর্থাৎ কারিগরি সহায়তার জন্য বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তা গ্রহণ করতে পারি।