অজয় দাশগুপ্ত
ঈদের পর কোথায় একটা সুন্দর গোছানো লেখা লিখব, হলো না। ঘাতক এখন ঈদ জামায়াত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশ মাত্র এককিলোমিটার দূরে, আমাদের তরুণরা ওৎ পেতে আছে আমাদের মারবার জন্যে। এটাই কি আমাদের চাওয়া? আমরা কি এজন্যে এদেশ চেয়েছিলাম? পলাতক তারুণ্যকে ফিরিয়ে আনার দুর্বল আহ্বানে এর সমাধান নেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত এসব দলের কাছে ভরসাও নেই আর। তাই চাই সামাজিক ব্যাখ্যা। …খেয়াল করবেন মাদ্রাসার নিরীহ সাধারণ ছাত্ররা এর ভিতর নেই…
এখন তো ব্লেইম গেমের সময় না। কেন আমরা বলছি সব দায় ভারত, আমেরিকা বা মোসাদের? কেন আমরা ধরে নিচ্ছি মদদদাতা পাকিস্তান? আমাদের কি এটা ভাবতে হবে না নিজেদের দোষ কোথায়? কেন আমাদের তারুণ্য আজ বিপথগামী? কোন রাজনীতি কোন অন্ধ বিশ্বাস এ কাজ করছে? আজ যখন দেশ বিপদে, আজ যখন সমাজ আক্রান্ত আমাদের সামনে আসছে লোমহর্ষক সব খবর। কেন এতদিন এসব কথা জানা ছিল না? কেন সমাজ জেনেও ঘুমিয়েছিল? এই যে ছেলেরা পালিয়ে গেছে বা ঘরছাড়া এটাতো সহজ কোনো ঘটনা হতে পারে না। পরিবার এতদিন ধরে কি করেছে? আমাদের সমাজ কি এমন না আমাদের পরিবারপ্রথা এমন যে একটা জিডি করলেই দায় চুকে যায়? এটা কি সে দেশ না, যেখানে একটি বালক হারালে সারা এলাকা জুড়ে মাইকিং হয়? আশপাশের মানুষ পরিচিতজনদের ঘুম ছুটে যায়। এমনও দেখেছি মায়েরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেন। পাগলের মতো হয়ে যান। পিতাদের কাজকর্মে মন লাগে না। ভাই বোনেরা কান্না আর আতঙ্কে দিন কাটায়। এইসব যুবকরা কি তবে পরিবারের কেউ নয়? কেন তাদের খোঁজার বেলায় এত দীনতা ছিল?
সমাজের এই দিকটা কেন আমরা ভাবছি না? আমাদের পরিবারের ভিতরেও যে হিংসা আর বিদ্বেষের বীজ, ঢুকে গেছে ধর্মের নামে মারাত্মক সব বিপদ। হয়তো তার একটা নেতিবাচক প্রভাব এসব তরুণদের ওপর পড়েছিল। আগেও লিখেছি প্রস্তুতিহীন যেকোনো কিছুই ভয়ংকর হতে পারে। এই যে আমাদের তরুণদের হাতে তরুণীদের কাছে ওপেন মিডিয়া এর যেমন পজিটিভ দিক তেমন নেগেটিভ দিকটা ভাবাও জরুরি। তারা আন্তর্জাতিকতার নামে আন এডিটেড মিডিয়ার গুজবের শিকার। আমেরিকা, ইসরায়েল, ভারত, পাকিস্তান, আইএস মিলে এ এমন এক জগৎ যেখানে নিত্যনতুন গুজব আর নানাধরনের উস্কানি। যেকোনো ঘটনাকে মাথায় রক্ত তুলে দেওয়ার মতো করে প্রচার চলছে চারদিকে। মুশকিল এই যার যার দায় তার একথা ভুলে বিশ্ব সংসারের মুসলমানের দায় মাথায় নেওয়ার এক আজগুবী চক্রান্তের শিকার এই তারুণ্য। খেয়াল করবেন মাদ্রাসার নিরীহ সাধারণ ছাত্ররা এর ভিতর নেই। তাদের চালায় দেশের রাজনীতি। নিয়ে আসলে শাপলায় আসে। পুলিশ বাতি নিভিয়ে দিলে গোলাগুলি দূরে থাক বাড়ি ফিরতেও জানে না। এরা ধার্মিক তবে জঙ্গি না। অল্প বা ধর্মীয় লেখাপড়া জানা তরুণরা এসব পারবে না। এখন আর সেøাগান বা রাস্তা বন্ধ করে চিৎকার করার দাপটে কাজ হয় না। তাই এদের দরকার লেখাপড়া জানা শহুরে তারুণ্য। এই সহজ হিসেবে মাথা পচে যাওয়া বিপথগামী যুবকরা দেশে দেশে নিজেদের জীবন হারিয়ে সন্ত্রাসের শিকার। আমরা বাদ যাব কোন দুঃখে?
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন