রহমান শেলী
সন্তানরা বিপথে গেলে মা-বাবা অনেক সময় মুখ খোলেন না। আবার কেউ কেউ খোলেনও। শেয়ার করেন, কী করা যায় তা নিয়ে ভাবেন।
মাদকে আসক্ত সন্তান। মা-বাবা জানিয়েছেন কী করা যায়? মা-বাবার সহযোগিতায় ব্যবস্থা নিয়েছি। সন্তান জানেনি, মা-বাবা এ ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন। আমি নিজে এ রকম অনেক কাজ করেছি এ ক্ষুদ্র চাকরি জীবনে।
মা-বাবাই একমাত্র অভিভাবক যারা তার সন্তানের চলাফেরা সহজে জানতে পারেন। সন্তান সন্দেহজনক কিছু করলে মা-বাবা তা সবার আগে জানবেন এটাই স্বাভাবিক।
আমি জোর গলাই বলতে পারি, যদি সময় মতো সন্দেহজনক বিষয়গুলো তদারকি করেন সন্তানরা সঠিক পথে ফিরে আসবে।
শুধু নামীদামী স্কুল-কলেজে ভর্তি করালে চলবে না। সময় দিন, কথা বলুন, বন্ধু কারা, জানুন। সন্তানদের আগে নিজের বন্ধু বানান। ব্যতিক্রম কিছু দেখলে গুরুত্ব দিন। ফলোআপ করুন। ধর্মের প্রতি হঠাৎ ঝুঁকতে পারে। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারে। তাতে কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো বিপথে যাচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। সন্তান যত বড়ই হোক বাবা-মায়ের কাছে বড় নয়। মা-বাবার এমন কিছু থাকা উচিত নয়, যা শেয়ার করা যাবে না। সবই শেয়ার করা উচিত। ভালো খারাপ, আপদ- বিপদ সব। কারণ, সম্পর্কটা মা-বাবা এবং সন্তানের।
বুঝানো উচিৎ, তাদেরকে জন্ম দেওয়া থেকে আজ পর্যন্ত বড় করতে মা-বাবার প্রয়োজন হয়েছে। লেখাপড়া, আদব-কায়দা শিখাতে মা-বাবার প্রয়োজন হয়েছে। ঠিক তেমনি সন্তান বড় হওয়ায় এখন মা-বাবার তাদের প্রয়োজন। সন্তানদের বড় করতে যে কষ্ট হয়েছে, যে ত্যাগ করেছেন, তা কথার মাঝে তুলে আনুন। আড্ডার মাঝে বুঝিয়ে দিন। আপনি বুঝান, বাবা আমরা বড় হয়েছি। আমাদের মা-বাবারাও বড় হয়েছেন। মা-বাবার আগেও তাদের মা-বাবা ছিলেন। ধর্ম পালন করেছেন। কই আমরা তো দেখিনি জঙ্গিবাদ করতে। এটা বিদেশি জিনিস। আমরা এটা ধার করতে চাই না।
হয়তো মাদকে আসক্ত, হয়তো অস্বাভাবিক গতিবিধি, জঙ্গি বা আরও অনেক খারাপ পথে সন্তান। লজ্জা না করে আগে আগেই বিষয়গুলো শেয়ার করুন। আপনার বিশ্বস্ত মানুষটির সঙ্গেও তা শেয়ার করতে পারেন। না হয় বড় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে। সন্তান ভুল করতে পারে। তার ভুল ধরিয়ে দেওয়া আপনার দায়িত্ব।
১ এপ্রিল গুলশান হলি বেকারিতে ২৮ জন হারিয়েছি আমরা। হামলায় অংশগ্রহণকারীরা আপনার আমার আশেপাশেই ছিল। শুধু মনিটরিংয়ের অভাব ছিল। সচেতনতার অভাব ছিল। এখন তা খুবই জরুরি। আমরা আর এ নৃশংসতা দেখতে চাই না।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও পুলিশ কর্মকর্তা
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন