কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জঙ্গিবাদের ‘কানেকশন’ পেলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জঙ্গিবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের উচ্চশিক্ষিত, নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়–য়া স্টুডেন্টদের একটি অংশ জড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে গোয়েন্দারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা জঙ্গি দমনে কাজ করছেন তারা। সাম্প্রতিককালে এই পর্যন্ত যে ক‘টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে সেই সব ঘটনায় ঢাকার নামি-দামি কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে এসেছে। ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তারা কেউ কেউ একসময় ছাত্র ছিলেন। আবার কেউ কেউ এখনও ছাত্র আছেন। এই পর্যন্ত যে ক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জঙ্গি কর্মকা-ে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন।
সরকার মনে করছে এই সব প্রতিষ্ঠানের জঙ্গি সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এখানে যে সব ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসেন তাদের গেটে ঢোকার সময়ে লক্ষ্য রাখা হবেÑসন্দেহজনক আচরণ করা স্টুডেন্ট সেখানে যাতায়াত করে কিনা।
জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম হিসাবে। সেই বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আমাদের আশঙ্কা ওই সব প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউও এই ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। কিংবা তারা এই সব কাজের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকতে পারে। এই সব সহযোগিতা কারা করছে ও স্টুডেন্টদের ব্যাপারে কেউ জঙ্গিবাদের জন্য কাউন্সিলিং করছে কিনা সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। পৃষ্ঠপোষকদের বের করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের নেতাদের অর্থায়ন রয়েছে সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। সম্প্রতি এক তরুণের ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ হয়েছে যে, তিনি নাকি মুজাহিদের ছেলে ও নিজামীর নাতির ছেলের সঙ্গে কাজ করতেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ ফোনে তারা একসঙ্গে কাজ করতেন বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। জঙ্গি সংগঠন ও জামায়াত পুরো বাংলাদেশ অচল করে দিতে চাইছে। এই জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। মীর কাশিম আলীর বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের আরও ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জঙ্গিবাদের আদর্শে অনুপ্রারিত হচ্ছে। এই অনুপ্রেরণা তারা পাওয়ার পর জঙ্গি কর্মকা- ঘটাচ্ছে। আমরা এই ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর করছি। যেসব প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টদের পরিচয় পাওয়া গেছে। সেই প্রতিষ্ঠানের ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। প্রয়োজন বিবেচনা করে এই ব্যাপারে সব ব্যবস্থা নিবে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবর্তে মানুষ খুনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কিনাÑ এমন প্রশ্ন তুলে বলেছেন বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি এবং শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের কাছে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন শোলাকিয়ার যুবকও নর্থ সাউথের।
সূত্র জানায়, যারা বাংলাদেশের এই সব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছেন তাদের মধ্যে যারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ও টার্গেট কিলিং ও আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তারা কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী সংগঠন আইএসে যোগ দিয়েছে বা আইএস, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ( জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) ও উগ্রপন্থী সংগঠনের হয়ে কাজ করছে বলে তথ্য আসছে। সেই ব্যাপারেও কাজ করছে গোয়েন্দারা। এছাড়াও নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে দশজন নিখোঁজের ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ হয়েছে। তারা হলেন, তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডা এলাকার জুনায়েদ খান , ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম, ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান, ধানমন্ডি এলাকার জুবায়েদুর রহিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী , লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন, সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি, জুনুন শিকদার। এর একজন ইব্রাহিম সৌদি আরবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শফি গ্রামীণ ফোনে চাকরি করত। তাহমিদ ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। ফাইয়াজ ইশমাম নামে উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এসএসসি পাস করার পর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি আশেকুর রহমান আইএস-এ যোগ দিয়েছেন। এছাড়াও নিখোঁজদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আরও নিখোঁজদের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করছে। সম্পাদনা : দীপক চৌধুরী