জঙ্গি টার্গেটে দক্ষিণাঞ্চল
শামীম আহমেদ, বরিশাল : জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা এবার নদী মাতৃক নিরাপদ এলাকা হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলাকে নতুন করে টার্গেট করেছে বলে ধারণা করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের অন্যতম সদস্য ফাইজুল্লাহ ফাহিম গত ১৮ জুন মাদারীপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার আগে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাদের পরবর্তী টার্গেট বরিশাল।
সূত্রমতে, ফাহিম মাদারীপুরের শিক্ষক (বরিশালের বাসিন্দা রিপন চক্রবর্তীকে) হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বরিশালের এক আইনজীবীর চেম্বারে বসে। অদ্যাবধি সেই আইনজীবীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বরং উল্টো জঙ্গিরা ইতোমধ্যে দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা ও সাগরপারের জেলা বরগুনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলোতে হামলার হুমকি দিয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাওহীদের সদস্যরাও এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেছে।
সূত্রমতে, গত ১৩ জুন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া শহরের সবুজনগর এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য আকরামুজ্জামানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ জুন গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে বরগুনা সদর উপজেলার হেউলিবুনিয়া এলাকা থেকে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানির ভাই আইউব আলী ও তার সহযোগী খলিলুর রহমানকে। এছাড়া উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাওহীদের দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার আমীরের বাড়ি জেলার গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামে হওয়ায় জঙ্গি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের মহাপ্রভুর মন্দিরে চিঠি পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। মন্দির কমিটির সদস্য নীহার কুমার মজুমদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ভোলা মডেল থানার ওসি মীর খায়রুল কবির বলেন, প্রতিটি মন্দিরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া ভোলার আরও কয়েকটি মন্দিরে হাতে লেখা প্রায় একই কায়দায় চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বরগুনা পৌর শহরের কড়ইতলা কালিবাড়ি এলাকায় রাধা গোবিন্দ মন্দিরে চিঠি দিয়ে পুরোহিত রাম প্রসাদ চক্রবর্তী সঞ্জয়কে হত্যার হুমকি দিয়েছে ‘পুরোহিত হত্যা সংগঠন’ নামের এক সংগঠন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের পরামর্শে ঐ পুরোহিত বরগুনা সদর থানা ও পুলিশ সুপার বিজয় বসাককে অবহিত করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু মন্দির পরিদর্শন করে আতঙ্কিতদের নির্ভয়ে থাকতে বলেছেন। বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, এ ঘটনার পর থেকে প্রতিটি গুরুতপূর্ণ এলাকায় পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার রাতে বরগুনার আমতলী এলাকার এক সংবাদকর্মী তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন, ‘আমাদের উপজেলা এবং জেলা লেভেলের সকল মন্দিরে চিঠি দিয়ে গেছে সেখানে যেন পূজা দেওয়া না হয়।’ এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, এমন খবর আমিও শুনেছি। তবে অনেক মন্দিরে নয়। কালীবাড়ি মন্দিরসহ দুটি মন্দিরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সব জায়গাতেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এসি ফরহাদ সরদার জানান, নগরীর সকল প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির পিপিএম বলেন, শুধু জঙ্গি নয়; যেকোনো হামলা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা