আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের বক্তব্য একেক সময় একেক রকম
শাহানুজ্জামান টিটু : সরকারের নানা কর্মকা- বিশেষ করে জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের কর্মকা-ের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর বলেছেন, সরকারের বক্তব্য একেক সময় একেক রকম। কিছু দিন আগে বলল জঙ্গি নাই। কখনও বলে আইএস আছে, আবার কখনও বলে আইএসের সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং তাদের প্রশ্নের উত্তর তাদের মুখ থেকে বিভিন্ন সময়ে বের হয়। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও আনুকূল্য পাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, আইএস ইত্যাদি সবাই মিলে প্রচার করে। আবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তখন তারা বলে দেশে আইএস ও জঙ্গিবাদ নাই।
বর্তমান সরকারের কর্মকা-ের সমালোচনা, বিএনপির কমিটি গঠনে বিলম্ব, আইএস, জঙ্গিবাদ, দলের মধ্যে সুবিধাবাদীরা পার্টির চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করার প্রসঙ্গসহ নানা বিষয় নিয়ে আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে কথা বলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। রাজধানীর নয়াপল্টনে তার নিজ অফিসে এই সাক্ষাতকারটি নেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ স্বভাব সুলভভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নানাভাবে চিহ্নিত করতে চায়, নির্মূল করতে চায়। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের ব্যর্থতা পাহাড়সম। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের অধিকার খর্ব করা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করে না। এসব কিছু মিলিয়ে জনগণ তাদের উপর ক্ষুব্ধ। সাধারণ মানুষের ভাবনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্যে তারা একেক সময় একেক কথা ও অজুহাত নিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করে। এরসঙ্গে কিছু মিডিয়া তাদের মদত দেয়। তারা প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর বলেন, দলের মধ্যে নিজের সুবিধার জন্য কখনও তারেক রহমান, কখনও পার্টির চেয়ারপারসনের নাম ব্যবহার করে। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যাবে আমাদের সঙ্গে তাদের (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ আমি দেদারসে তাদের নাম বিক্রি করে চলছি। দলের মধ্যে এমন লোক আছেন। যেহেতু তারা দুজন দুপ্রান্তে রয়েছেন।
গত ১৯ এপ্রিল জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি আপনার দল। কমিটি গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে পদ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, কাউন্সিলররা কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসন কারো সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি গঠন করবেন প্রস্তাবে এমন কথা নেই। না থাকলেও চেয়ারপারসন মনে করলে কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন। চেয়ারপারসনকে কাউন্সিলররা দায়িত্ব দিয়েছে। তাই সেই দায়িত্বটা পালন তিনি এককভাবে করবেন বা অন্যের সঙ্গে আলাপ করে করবেন তা ওই প্রস্তাবে নেই। ওনি যেখানে নিরাপদ যার সঙ্গে প্রয়োজন আলাপ করবেন।
মা-ছেলের মধ্যে মতবিরোধের কারণে কমিটি গঠনে বিলন্ব হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় সংবাদ বের হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গয়েশ্বর বলেন, চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান একটা বিরাট দূরত্বে অবস্থান করছেন। তারা কাছাকাছি না। তাদের টেলিফোন আলাপটাও নিরাপদ না। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মতবিনিময়টা কারো না কারো মাধ্যমে করতে হয়। খালেদা জিয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করেন আবার একথা জানি না তিনি তার সঙ্গে আলাপ করেন না। এটা তার একান্তই নিজস্ব এটা জানার বিষয় না।
পদ বাণিজ্য এখন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আমাদের অনেক মানুষ, প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এক হয় না। ভিন্ন ভিন্ন হয়। এখন পছন্দের মতো না হলেই বাণিজ্য শব্দটা জুড়ে দিলাম। আবার যার পছন্দের মতো হলো আরেকজনের পছন্দ হলো তিনিও বাণিজ্য শব্দটা জুড়ে দিল। সুতরাং বাণিজ্য শব্দটা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো পথ নেই। কমিটি গঠনের দায়িত্ব পার্টির চেয়ারপারসনের।
তিনি বলেন, ওনি (খালেদা জিয়া) যখন কমিটি করছেন ওনার নিশ্চয় নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে ও জানা আছে। যাদের কমিটিতে দায়িত্ব দিচ্ছেন তাদের সম্পর্কে ওনার একটা ধারণা আছে। সকল ধারণা মিলেই তিনি যা উপযুক্ত মনে করছেন ওনি সেটাই করছেন। এখানে যদি বাণিজ্য শব্দটা আনা হয় তাহলে কার বিরুদ্ধে বাণিজ্য, শব্দটা কার বিরুদ্ধে আনছেন। এখানে তো কেউ জড়িত না। এছাড়া সবার মনে একটা প্রশ্ন রয়েছে ম্যাডাম কাউকে জিজ্ঞেস করছেন না। তাহলে বাণিজ্যটা কে করল। বাণিজ্য শব্দটা যদি এই বেলায় জুড়া হয় তাহলে আমরা পার্টির চেয়ারপারসনকে অসম্মান করছি কিনা এই প্রশ্নটা এসে যায়।
পার্টির চেয়ারপারসন যদি আমাদের উপরে আস্থা বা বিশ্বাস হারায় তাহলে কাকে নিয়ে দল করব। আমরা অন্তর থেকে বলি খালেদা জিয়ার বিকল্প বিএনপিতে নেই। তাহলে সেই নেত্রীকে আমরা যদি এসব কথা বলি তাহলে সেটাতো শিষ্টাচার বহির্ভূত। কারণ যারা এ ধরনের কথা বলেন আমি মনে করি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ম্যাডামের টিমে যদি দশজন লোক থাকতো তাহলে ওনার বাইরে দশজন লোককে নানাভাবে চিহ্নিত করা যেতে পারত। অভিযোগ আনা যেত। সত্য মিথ্যা যাই হোক মানুষ কিছুটা বিশ্বাস করত কিছুটা অবিশ্বাস করত। কিন্তু সিনিয়র নেতারা যখন আড়ালে-আবডালে এই অভিযোগটা করেন তাহলে আমার প্রশ্ন এই বাণিজ্যটা কে করেন।
দলের কেউ কেউ এবং চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারীসহ গুলশান কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন? জবাবে গয়েশ্বর বলেন, পার্টির চেয়ারপারসনের ক্লোজ টাচে যারা সবসময় থাকেন তাদের সম্পর্কে নানা মানুষের নানা অভিযোগ নানাভাবেই হবে। হওয়ার একটা মাত্র কারণ। আমার উদ্দেশ্যটা যদি আমি সফল করতে না পারি তখন আমরা বলে থাকি এর কারণে হলো না। এবার কমিটি নিয়ে পত্রপত্রিকায় যেভাবে আসছে একথাগুলো আসার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে আমরা সবাই যদি চুপ থেকে ওনাকে সহযোগিতা করতাম তাহলে ওনার কাজটা ওনি আরও সুন্দরভাবে করতে পারতেন। আমি বসে থাকলেও অন্যরা যে বসে আছে তা আমি বলব না। নানাভাবে নানা অ্যাঙ্গেলে তারা পার্টির চেয়ারপারসনকে বিরক্ত করছেন। এটা এক ধরনের অসহযোগিতা করা। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম