বাংলাদেশে ‘আইএস’ আছে কী নেই
মোহাম্মদ আলী বোখারী ষ টরন্টো থেকে
সরকারের অস্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি ইসলামিক স্টেট বা আইএসের উপস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তথাপি প্রায় এক মাস আগেই কানাডার শীর্ষ স্থানীয় অন্তত দুটি জাতীয় দৈনিক- ন্যাশনাল পোস্ট ও টরন্টো স্টার সে বিষয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে।
এতে প্রতীয়মান হয় যে, কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উইন্ডসরের সাবেক বাসিন্দা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে আইএস বাংলাদেশে সংগঠিত হচ্ছে। ওই দুটি পত্রিকা কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজিলিয়েন্স রিসার্চ সেন্টারের পিএইচডিসম্পন্ন ফেলো অধ্যাপক অমরনাথ আমারাসিঙ্গামকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে- ‘হি ইজ ফ্রম উইন্ডসর’। ওই অধ্যাপকের ভাষায়- ‘পিপল হু নিউ হিম সেহ হি ওয়াজ এ কোয়াট গাই। নট মাচ এলস্ ইজ নউন অ্যাবাউট হিম এট দ্য মোমেন্ট’। অর্থাৎ লোকে জানতো সে ছিল শান্ত প্রকৃতির। এ মুহূর্তে তার সম্পর্কে এর বেশিকিছু জানা যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৮ জুন কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট কথিত আইএস সংগঠক তামিম চৌধুরীকে নিয়ে স্টুয়ার্ট বেলের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম- ‘হি ইজ ফ্রম উইন্ডসর : কানাডিয়ান আইডেন্টিফাইড এজ লিডার অব আইএসআইএল অ্যাফিলিয়েট ইন বাংলাদেশ’। অর্থাৎ সে উইন্ডসরের বাসিন্দা : বাংলাদেশে আইএসআইএলের অঙ্গীভূত নেতা হিসেবে কানাডার নাগরিক চিহ্নিত। একইভাবে দুদিন পর অর্থাৎ ১০ জুন টরন্টো স্টার নিজস্ব সংবাদদাতা অলিভার সেকগাউয়ের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম- ‘উইন্ডসর ম্যান ইজ রিপোটেডলি লিডিং দায়েস ইন বাংলাদেশ’। অর্থাৎ উইন্ডসরের লোকটি বাংলাদেশে দায়েসের (ইসলামি জঙ্গিদের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের বহুল ব্যবহৃত পরিচিতি) নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আপাতদৃষ্টিতে পরিবেশিত ওই দুটি সংবাদ বিশ্লেষণে কথিত কানাডিয়ান জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরীর নামটি সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অবলম্বনে এসেছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে- বাংলাদেশের পত্রিকা ডেইলি স্টার অনুসারে তামিম চৌধুরী, যার পরিচিতি শেখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ হিসেবে, সে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দায়েস বা আইএসআইএস অথবা আইএসআইএলসংশ্লিষ্ট জঙ্গি একটি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, ঢাকার ডেইলি স্টার গত ৭ জুন ‘মিলিট্যান্টস গ্রো ইন সায়লেন্স’ বা ‘নিভৃতে জঙ্গিত্বের বিকাশ’ শিরোনামে তাদের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ও সামরিক বিষয়াবলিতে অভিজ্ঞ জায়েদুল আহসানের একটি সচিত্র শীর্ষ প্রতিবেদন অতীব গুরুত্বে প্রথম পাতায় ছাপায়, যার পরদিন থেকেই কানাডার ওই দুটি পত্রিকায় তামিম চৌধুরীর নামটি ‘আইএস’ নেতা হিসেবে চাউর হতে থাকে। স্টারের এ প্রতিবেদনটির প্রারম্ভেই রয়েছে- বিগত কয়েক বছরে সরকার যখন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সদস্যদের নির্মূলে গর্ববোধ করছে, ঠিক তখনই গত বছর থেকে অগোচরে নতুন দুটি উগ্রপন্থি ইসলামি গ্রুপ তাদের শাখা-প্রশাখার বিপুল বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। একটি গ্রুপ আল-কায়েদার প্রতি অনুরক্ত এবং অপরটি ইসলামিক স্টেট (আইএস) কর্তৃক প্রভাবান্বিত। আল-কায়েদামুখী গ্রুপটি আনসার আল ইসলাম হিসেবে পরিচিত, যা ২০১২ সালে সংবাদ শিরোনাম হওয়া ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় বরখাস্ত মেজর সৈয়দ এম জিয়াউল হকের নেতৃত্বে প্রায় ২০০ প্রশিক্ষিত সদস্য নিয়ে পরিচালিত। অপরটি আইএসের প্রতি অনুরক্ত বাংলাদেশি-কানাডিয়ান তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ঘটছে, যার পরিচিতি আইএসের মুখপত্র ‘দাবিক’ অনুসারে শেখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ হিসেবে, যারা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কারিগর, স্থপতি ও শিক্ষিতদের সংগ্রহ করছে। বিশ্লেষণ নমুনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আনসার আল ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষ লেখক বা ব্লগার এবং সমকামী অধিকার কর্মীদের টার্গেট করছে। আর তথাকথিত আইএসের টার্গেট হচ্ছেন হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা বাহাই ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় নেতা বা পীর, শিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ধর্মান্তরিত এবং বিদেশি নাগরিক। পরিশেষে তাতে কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিক কারণে পরিস্থিতি ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ায় ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের জঙ্গিরা উপমহাদেশের পানে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং দেশ থেকে এই জঙ্গিদের পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও ‘তাদের ঘিরে ফেলেছি’। তা সত্ত্বেও ডেইলি স্টার তাদের ওই প্রতিবেদনে গোয়েন্দা ভাষ্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তুলে ধরেছে- বাংলাদেশে আইএস আছে কী নেইÑ এই বিতর্কটি নিরর্থক, কেননা জঙ্গি গ্রুপের আতঙ্কটি বাস্তবোচিত।
ই-মেইল : নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স