কাশ্মীর সংঘর্ষে নিহত ১৬, আহত ২০০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জম্মু-কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় ২০০ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। আহতদের মধ্যে ৯৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
এদিকে শ্রীনগরসহ দক্ষিণ কাশ্মীরের বেশকটি এলাকায় জারিকৃত কারফিউকে বিস্তৃত করা হয়েছে। এবার পুরো কাশ্মীর উপত্যকাজুড়েই কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংস পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো অমরনাথ যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে চলমান বিক্ষোভ দমন করতে আধা সামরিক বাহিনীর ১২০০ সদস্যকে সহিংস অঞ্চলে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে প্রাণ হারানো হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান মুজাফফর ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৯ জুলাই থেকে নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠে কাশ্মীর। এদিন কারফিউ আর বাধা উপেক্ষা করে বুরহান ওয়ানির মৃতদেহ নিয়ে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বিভিন্ন থানা, বিজেপি অফিস এবং নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা চালায় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। একটি পুলিশ স্টেশনে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর থেকে তিন পুলিশ সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন।
কাশ্মীরজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। জম্মুতে সাময়িক সময়ের জন্য অমরনাথ যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। স্কুল বোর্ড পরীক্ষাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে আধা সামরিক বাহিনীর ১২০০ সদস্যকে পাঠানোর পরিকল্পনা করে সরকার।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সেনা ও পুলিশ যৌথ অভিযানে বুরহান ওয়ানিসহ তিন হিজবুল যোদ্ধা নিহত হন। হিজবুল কমান্ডার নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রীনগর এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের বেশকিছু এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনন্তনাগের কোকেরনাগ এলাকায় তার বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলাকালে বুরহান নিহত হন বলে দাবি করে ভারতীয় পুলিশ। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলৌমা ও শ্রীনগরের আংশিক অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়।
কারফিউ আর বাধা উপেক্ষা করে ভারতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে প্রাণ হারানো হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান মুজাফফর ওয়ানির জানাজায় মানুষের ঢল নামে। শেষ তাকে দেখা গিয়েছিল গত মাসে অনন্তনাগে তিন পুলিশকর্মীর নিহত হওয়ার পর সোস্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচারিত ভিডিওতে। তাতে সে পুলিশের ওপর আরও হামলার হুমকি দেয়। ভারতে তার পরিচিতি কাশ্মীর উপত্যকায় ‘সন্ত্রাসবাদের পোস্টার বয়’! মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের তালিকায় তার নাম ছিল।
বুরহানকে মরিয়া হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। তার অবস্থান জানাতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া আগাম খবরের ভিত্তিতে তাকে খুঁজে বের করে নিরাপত্তাবাহিনী। সকালে বুমদুরা গ্রামে তাকে ঘিরে ফেলে পুলিশ ও সেনার যৌথ দল। সংঘর্ষে আরও ২ জঙ্গির সঙ্গে সে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিকে, পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রের কাছে আরও ৩০ কোম্পানি নিরাপত্তাবাহিনী পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর সরকার। কেন্দ্র তা পাঠাচ্ছে অবিলম্বে। ইউজিসি-র ‘নেট’ সহ যাবতীয় পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। প্রায় গোটা উপত্যকা জুড়েই মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবাও সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ