ছদ্মবেশে জঙ্গিরা সাবধান!
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন তথ্য রয়েছে। গাড়ির ড্রাইভার, হকার, রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশা তারা গ্রহণ করছে। নামও তারা পরিবর্তন করেছে। দিনে কাজ করে রাতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গি তৎপরতা চালায়। এসব বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে জঙ্গিরা ছদ্ম নাম ব্যবহার করে ঢাকায় বাড়িভাড়া নেয়। দেখে তাদের জঙ্গি মনে হয় না। তাদের চলাফেরা এবং তাদের সঙ্গে একটু কথা বললেই বুঝা যাবে তারা জঙ্গি কিনা? ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা ছদ্ম নাম ব্যবহার করে চলাফেরা করছে।
গত ৮ জুলাই মিরপুর ১১ নম্বরে রিকশা চালাচ্ছেন এক জঙ্গি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে তার রিকশায় ওঠে মাঝ বয়সি এক মহিলা। ওই মহিলা সাড়ে ১১ নম্বর তার বাসায় যাওয়ার জন্য ঠিক করছেন। ভদ্র মহিলার রিকশা চালকের পোশাক দেখে সন্দেহ হলে তিনি রিকশা চালকের কাছে জিজ্ঞাসা করেন আপনাকে তো রিকশাওয়ালা বলে মনে হয় না, আপনি কেন রিকশা চালাচ্ছেন? তখন রিকশাওয়ালা বলেন, আমার পরিবার গবির তাই রাতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। কিছুদূর যেতেই ওই ভদ্র মাহিলা রিকশা থামিয়ে একটি শপিংমলে কিছু কেনাকাটা করছিলেন। আসার পর তিনি দেখতে পান রিকশাচালক ফোনে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলছেন অন্যজনের সঙ্গে। তিনি এতটুকু শুনেছেন, অপারেশনের কথা পরে জানাব তোকে।
ফেসবুকে যারা ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ায়, যারা উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে, এমন কিছু দেখলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ফেসবুক। দোকানদার-হকার, কেউ পাগলের বেশে কিংবা বাস-ট্রাকচালকের সহকারী এভাবে ছদ্মবেশে চট্টগ্রাম নগরে অবস্থান করছেন জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। গত বছর ৮ অক্টোবর পুলিশ এই তথ্য দিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারও ফেসবুকে জঙ্গি প্রচার, ছবি ও লাইক দেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে।
বুলবুল আহমেদ ওরফে আপেল ওরফে ফুয়াদ নামের এক যুবককে জঙ্গি সন্দেহে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশ এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হয়। পুলিশের দাবি, ফুয়াদ জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। গ্রেফতার হওয়া ফুয়াদ দোকানদারের ছদ্মবেশে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন গণমাধ্যমের কাছে।
বিষয়টি স্বীকার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. বাবুল আক্তার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, পাগল, দোকানদার ও হকার বেশে জেএমবির বেশকিছু সদস্য গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক নজরদারির কারণে তারা সংগঠিত হতে পারছে না। সংগঠিত হয়ে কিছু করার চেষ্টা করলে ধরে ফেলা হচ্ছে। গ্রেফতার জঙ্গিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ছদ্মবেশে থাকা পলাতক জঙ্গিদের ধরার চেষ্টা চলছে।
গত বছর চট্টগ্রাম থেকে জঙ্গি ফুয়াদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জঙ্গি ফুয়াদ তিনি নিজেকে ফটোস্টেটের দোকানদার পরিচয়ে ছদ্মবেশে জঙ্গি তৎপরতা চালায়। ফারদিন নামের এক বড় ভাই তাকে চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট এলাকায় দোকানটি খুলে দেন। ওই দোকানে তারা গোপনে বৈঠক করতেন। কিন্তু গত ২৩ মার্চ তাদের দলের সদস্য এরশাদ হোসেন ওরফে মামুন জনগণের সহায়তায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে দোকানটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। পরে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাইবান্ধায় ঘুরে দলের বাকি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। লোকজন যাতে সহজে সন্দেহ না করে এ জন্য মুঠোফোনে প্রেমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থেকে এক নারীকে বিয়েও করেন। এরশাদও পাগলের ছদ্মবেশে থাকতেন। যাতে সহজে কেউ সন্দেহ না করে।
গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর নগরের সদরঘাটে ছিনতাই করতে গিয়ে নিজেদের ছোড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত তাদের সদস্য রবিউল ইসলামও ছদ্মবেশে দিনমজুরি করতেন। পাগলের ছদ্মবেশে থাকা এরশাদ হোসেন আটক হওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার নেতা মো. ফুয়াদ ও মো. ফারদিন। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারা জেএমবির হয়ে কাজ করছেন। পরে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এরশাদ একই তথ্য দিয়েছেন। সেই ফুয়াদ গত সোমবার আটক হলেও ফারদিনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, গ্রেফতার জঙ্গিদের অস্ত্র-গুলি সরবরাহ থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিচালনার কাজ করছেন ফারদিন। তাকে গ্রেফতার করা গেলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এরশাদকে গত বছরের ২৩ মার্চ নগরের নিউ মনসুরাবাদের বাগানবাড়ি এলাকা থেকে জনগণের সহায়তায় আকবর শাহ থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে জেএমবির চট্টগ্রাম জেলার কমান্ডার দাবি করেন।
নগর ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার আরেক জঙ্গি সুজন ওরফে বাবুও জানিয়েছেন ছদ্মবেশে থাকেন তারা। তিনি প্রকাশ্যে ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে থাকলেও গোপনে জেএমবির কাজ করতেন। লোকজন যাতে সন্দেহ না করে, তাই তারা বাইসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করেন। এমনকি বোমা সরঞ্জামও সাইকেলে পরিবহন করতেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট, ৩ অক্টোবর, ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে বোমাহামলা চালায় জেএমবির জঙ্গিরা। এসব হামলার নেতৃত্বে ছিলেন জেএমবির তৎকালীন সামরিক কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন। জাবেদ কারাগারে আটক থাকলেও সুমনকে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গিরা প্রিজন ভ্যানে গুলি করে ছিনিয়ে নেয়। এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার খোঁজ পায়নি।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কী না করা হয় ফেসবুকে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, হত্যার হুমকি দেওয়া, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বিশেষ কোনো কারণে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা, শান্তি বিনষ্ট করা কিংবা সহিংসতা ছড়ানোর মতো বক্তব্য প্রচার করা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ব্যবহার করে এমন তৎপরতা খুব দৃশ্যমান।
এমন তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে ফেসবুক। গত বছর সেপ্টেম্বরে এক খোলা চিঠিতে এ খবর জানিয়েছেন ফেসবুকের গ্লোবাল পলিসি ম্যানেজমেন্ট-এর প্রধান মনিকা বিকার্ট এবং ফেসবুকের ডেপুটি জেনারেল কাউন্সেল ক্রিস জন্ডারবি। চিঠিতে জানানো হয়, ফেসবুক সবার নিরাপত্তার স্বার্থে নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ