তুরস্ক দিয়ে সিরিয়া যাওয়ার পথে বাংলাদেশের শিল্পপতির নাতিকে দেশে ফেরত বিদেশে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি তরুণদের তথ্য সংগ্রহ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : ইংরেজি মাধ্যমে পড়া এবং এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশের তরুণদের সন্দেহের বাইরে রাখছে না বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাদের অনুরোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে মৌখিক নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, বিদেশে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য রাখার।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এসব বিপদগামী তরুণরা তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সিরিয়ায় যাচ্ছেন। গত শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক বাংলাদেশি তরুণকে সিরিয়া যাওয়ার পথ থেকে ফিরিয়ে দেশে পাঠিয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত এ তরুণ বাংলাদেশের একজন শিল্পপতির মেয়ের সন্তান। তবে গতকাল পর্যন্ত তার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশের তরুণরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে কেন ফিরছে না সে বিষয়েও খোঁজ নিতে শুরু করেছে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
বিশেষ করে তুরস্কসহ মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বিমানবন্দরে গত এক বছরে পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের উপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলায় বিদেশে পড়–য়া বাংলাদেশের তরুণদের জড়িত থাকার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশি ছাত্র ও তরুণদের উপর নজরদারী বাড়িয়েছে সংস্থাগুলো। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ ব্যাপারে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পরপরই বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী শিক্ষার্থীদের ডাটা তৈরি এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে বলা হয়।
তিনি জানান, গুলশানে ইংরেজি মাধ্যম ও বিদেশে পড়–য়া ছাত্রদের জড়িত থাকার ঘটনার পর বিদেশেও বাংলাদেশের ছাত্রদের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পরবর্তীতে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসাও কড়াকড়ি আরোপ হতে পারেÑ এ আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
এদিকে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, গত শনিবার তুরস্ক থেকে এক তরুণকে জঙ্গি সন্দেহে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। ওই তরুণ প্রথমে পড়ালেখার জন্য মালয়েশিয়ায় যায়। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় জঙ্গিদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার।
জানা গেছে, ওই তরুণের সিরিয়া যাওয়ার খবরটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তুরস্ক সরকারকে জানায়। তুরস্ক পুলিশ ইস্তাম্বুলে কামাল আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ ওই জঙ্গিকে আটক করে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। ওই তরুণ বাংলাদেশের একজন বড় শিল্পপতির পরিবারের সন্তান বলে জানা গেছে।
তবে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি তুরস্কের আংকারায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে, দূতাবাসের একজন কর্মচারী নিজেকে রুবেল পরিচয় দিয়ে বলেন- অফিস বন্ধ হয়ে গেছে, আমি বিষয়টি বলতে পারবো না। কাল অফিস সময়ে ফোন করলে জানতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকী বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছেন বলে জানা যায়।