কিভাবে ফিরিয়ে আনা যাবে তাদের?
অজয় দাশগুপ্ত
যে কারণে বলছিলাম এখন নিজেদের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। দুনিয়ার সবদেশ, সব জাতিতে সমস্যা আছে। থাকবে। ইন্দোনেশিয়ার স্বল্পকালীন সময়ের প্রেসিডেন্ট ইসলামিক স্কলার আবদুর রহমান ওয়াহিদ বলতেন ফিলিস্তিন সমস্যার দায় তিনি নেবেন না। তিনি সাহায্য করবেন বটে ঝামেলায় জড়াবেন না। এ কথাগুলো এখন খুব দরকারি। বিশ্বসংসারের দায় বাঙালির হাতে দেয়নি কেউ। যার যার সমস্যার সমাধান করবে তারা নিজেরা। জঙ্গি হয়ে দু’চারটে মানুষ বা কিছু লোকসান করে কেউ কোনোদিন পৃথিবীর কিছু থামাতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা এটা ইসলাম স্বীকৃতও নয়। তবু আজ এর দায় চুকাচ্ছি আমরা। আমি বলব এর জন্য আমাদের সমাজের সুশীল নামে পরিচিতজনরাও কম দায়ী না। একটা সময় ছিল যখন সংস্কৃতি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। সুবিধাবাদ তাকে গিলে খেয়েছে। যৌবনের প্রাকপর্বে মানুষের মন ও মননের পরিচর্যা করে সংস্কৃতি। আমাদের দেশের শিশু সংগঠনগুলো মৃত। কিশোর কিশোরীদের কোনো সংগঠন নেই। যৌবনে নেই উজ্জ্বলতা। রাজনৈতিক কর্মকা- ছাড়া তাদের যাবার জায়গা কোথায়? যারা এসবে যায় না তাদের জন্য বাকি থাকল কম্পিউটার নির্ভর নীলপর্দার জগৎ যেখানে একদিকে অতল আহ্বান আরেকদিকে এখন উন্মাদনা। এইসব তরুণরা শেষেরটার শিকার। বিক্রিত বুদ্ধিজীবী বিকৃত সুশীলরা একদিকে সরকারের নামে সুবিধাবাদের শিকার অন্যদল আছে ভারত ও হিন্দু বিদ্বেষের নামে জামায়াত তোষণে ব্যস্ত। এই বদলে যাওয়া সুশীলরা যেখানে নিহত ফারাজের জন্য কেঁদে বুক ভাসায় আবার দায় নিতে চায় না। তখন তাদের বলার সুর পাল্টে যায়। বলেন সবনাকি চাপিয়ে দেওয়া অন্য কারও কারসাজি। কোথায় মূলে গিয়ে কারা ট্রেনিং দিলো কারা এসব আস্তানা চালায় বা কেন এমন হচ্ছে তা নিয়ে জনমত গড়ে তুলবে তা না করে এরা আছে আত্মপ্রশান্তির এক কঠিন স্বার্থপর অবস্থানে। এভাবে চললে এ সমস্যার সমাধান মিলবে না।
যেসব তরুণ বা যুবকরা হারিয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে বা যাদের ফিরে আসার জন্য রেডিও টিভিতে ডাক পাঠানো হচ্ছে তারা কি আসলে পলাতক? তারা তো স্বেচ্ছায় লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে আছে বলাটাও ঠিক না। এরা কিলিং মিশনের সদস্য, আত্মঘাতী। জীবনকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য কেউ পালায় না। তারা গেছে নিজেদের অন্ধবিশ্বাস ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য। সুবোধ ডাকে বা সরকার কিংবা জনগণের ডাকে ফেরার মগজ তারা হারিয়েছে অনেক আগে। যারা মা বাবা ভাইবোন আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের কথা মনে রাখেনি তারা শুনবে সাধুবচন। ডাকলেই চলে আসবে তারা? আসবে না জেনেও এই প্রচারের একটা ভালো দিক তাদের চিহ্নিত করা, আরেকটা যেটা মন্দ সেটা হচ্ছে তারা যদি জেনে যায় সময় কম আরও হিংস্রতাই হয়তো ডেকে আনতে চাইবে। তাই এখন সাবধানতার সময়। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় গলিতে গলিতে মানুষ যদি কারও আচরণ বা স্বভাবে পরিবর্তন দেখে ভয় পায় জানাতে হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজে বাঁচুন অপরকে বাঁচান এই বাণীর বিকল্প নেই আজ।
সবার আগে পরিবারে চাই শুদ্ধতা। মনের কোণে বা চিন্তায় যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ পুষে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিরোধিতার নামে উস্কানি বা প্রশ্রয় দিলে এ কাজ হবে না। আমরা এমন দেশে থাকার কথা ভাবিনি। আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদেরও এমন দেশে থাকার কথা ভাবি না। মানুষ কি এরপরও চুপ থাকবে? চাইবে কি এদেশ বাংলাস্তানে পরিণত হোক। আজ যে ঘর বা বাড়ি নিরাপদ কাল যে রক্তাক্ত হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? সাবধান স্বদেশ। সাবধান রাজনীতি। সাবধান বাঙালি।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন