জঙ্গিবাদ নির্মূলে সম্মিলিত অংশগ্রহণ জরুরি
ড. বদরুল হাসান কচি
শোলাকিয়া ঈদগাহের ঘটনায় পুলিশ-জঙ্গি সংঘাতে পড়ে ময়না রানী ভৌমিক নামে একজন গৃহবধূ নিহত হন। ঈদের দিনে প্রতিবেশিদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করার জন্য ভিন্ন ধর্মের মানুষ হয়েও ময়না রানী ঘরে সেমাই তৈরি করার পর রুটি বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই ঘটে এই অঘটন। এটাই হচ্ছে চিরায়ত বাংলার রূপ। …বাংলাদেশি মুসলিমরা উদার মুসলিম। তবে কোনো
কোনো গোষ্ঠী ধর্মভীরুতাকে নিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাই দেশের সকল মানুষের মধ্য সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে সেই গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করা জরুরি…
এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে থেকেছে। একে অপরের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে পালন করেছে। ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও সামাজিক সাংস্কৃতিক উৎসবে ধর্মের শৃঙ্খল ভেঙে সবাই একই কাতারে এসে আনন্দে মেতেছে। অথচ কালের বিবর্তে আজ আমরা এখানে এসে দাঁড়িয়েছি; মানুষ বিবেচিত হয় ধর্মের মাপকাঠিতে। সেজন্য প্রধানতম দায়ী দেশিয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি। এই পরিস্থিতি অল্প সময়ের ব্যবধানে আসেনি; সুদীর্ঘকাল এই চর্চাটি হয়ে এসেছে।
এই বিভাজনে আমরা জঙ্গিবাদের রূপ দেখতে পাচ্ছি। ব্যাপারটি কতটা স্বচ্ছ তা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া আরেকটি উদাহরণ আলোকপাত করলেই বোঝা যায়Ñ দেশের ইতিহাসে জঙ্গিবাদের নতুন আস্ফালন দেখল গোটা দেশ। অতীতে জঙ্গিদের অল্পস্বল্প সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটলেও কাউকে জিম্মি করে বেছে বেছে মানুষ হত্যার ঘটনা দেখেনি। নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে স্তম্ভিত হয় সকলে। ওই ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযানে জঙ্গিরা মারা যায়, উদ্ধার হয় সাধারণ নাগরিক। জীবিত অনেকে গণমাধ্যমে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন জঙ্গিরা মুসলিম ছাড়া বাকিদের জবাই করে হত্যা করেছে। আবার যে সকল মুসলিম কুরআন পড়তে পারেনি কিংবা ইসলামের নানান বিধি-নিষেধ মেনে চলেনি তাদেরকেও হত্যা করেছে।
এই দেশের মানুষ ধর্মভীরু তা ঠিক আছে কিন্তু ধর্ম নিয়ে উগ্রতা নেই, অতীতে তো ছিলই না। আজ যখন কিছু ধর্মান্ধগোষ্ঠী ধর্মের নামে মানুষ হত্যায় নেমেছে তখন সারাদেশের মানুষ হতবাক। ধিক্কার জানাচ্ছে জঙ্গিদের। এমনও দেখেছি যিনি অত্যন্ত ধর্মভীরু তিনিও বোকার মতো হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছে, ওরা মানুষ হত্যা করছে কোন যুক্তিতে, হত্যা সন্ত্রাস সে তো ধর্মে নেই?
বাংলাদেশি মুসলিমরা উদার মুসলিম। তবে কোনো কোনো গোষ্ঠী ধর্মভীরুতাকে নিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাই দেশের সকল মানুষের মধ্য সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে সেই গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করা জরুরি। সে মোকাবিলা কেবল রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্ভব নয়, সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও এমনটা বলা হচ্ছে; কারও সন্তান নিখোঁজ কিনা তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে, কোনো সন্তান জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে কিনা সেদিকে তীক্ষè নজর রাখতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের শিক্ষার্থীদের গতিবিধির প্রতি সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছে।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন