বনানী-গুলশানের ৫০ রেস্টুরেন্টের দিকে চোখ গোয়েন্দাদের
দীপক চৌধুরী : গুলশান, বনানী ও বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় ৫০ রেস্তোরাঁর ব্যাপারে গোয়েন্দাদের নজরদারী বাড়তি হয়েছে। এসব রেস্তোরাঁয় বিদেশি নাগরিকদের যাতায়াতের পাশাপাশি তাদের পছন্দ মতো খাবারও সরবরাহ হয়ে থাকে। হলি আর্টিজানে হামলার মতো নৃশংস ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশও পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায় সরকারি তিনটি সংস্থার অধীন আবাসিক এলাকায় মোট বাণিজ্যিক হোল্ডিং রয়েছে ৫ হাজার ৪৮৮টি। এর মধ্যে বৈধ ৫৬৮টি। বাকি ৪ হাজার ৯২০টিই অবৈধ।
ডিএমপির গুলশান ডিভিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গিগোষ্ঠীর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও সড়কের পাশের ভবন এবং স্থাপনায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) বসানো হয়েছে। বিশেষ করে উল্লেখিত এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোর পাশের সড়কে গোয়েন্দা টহলের পাশাপাশি পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। র্যাব ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এসব রেস্তোরাঁয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মান, জাপান, থাইল্যান্ড, স্পেন, মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা পছন্দমতো খাবার খান। এসব রেস্তোরাঁয় বাঙালি খাবারও পরিবেশন করা হয়।
১ জুলাই সন্ত্রাসীরা হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে ওইসব এলাকার সব ধরনের অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত ২০ জনের মধ্যে চারটি দেশের নাগরিক রয়েছেন। এর মধ্যে জাপানের সাতজন, ইতালির নয়জন, ভারতের একজন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া একজন বাংলাদেশিও রয়েছেন নিহতদের মধ্যে।
দেশ কাঁপানো এ ঘটনা তদন্তকারী কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) একজন কর্মকর্তা জানান, গুলশানের হোটেল আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর এবার ওইসব অভিজাত হোটেলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হোটেলগুলোর বেশকিছু সার্ভিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে রেডিসনের মূল গেট বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। বিদেশিদের নিরাপত্তায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। রেডিসনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য আবদুল খালেক বলেন, ঘণ্টাখানেক আগ থেকে আমাদের সব সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেডিসন কর্তৃপক্ষ জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে হোটেলের গেট থেকে রেডিসনের নিজস্ব গাড়ি দিয়ে গেস্টদের ভেতরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এদিকে রুম সার্ভিস ছাড়া গতকাল সোমবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোটেলের বাইরে এ সংক্রান্ত একটি নোটিস টাঙিয়েছে লেকশো কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্ধ হওয়া সার্ভিসগুলোর মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট ও হল বুকিং। লেক শোর নিরাপত্তা কর্মকর্তা সেলিম জানান, গুলশানের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে কয়েকটি সার্ভিস বন্ধ ছিল। তবে গতকাল থেকে সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ।
এর আগে গত ১০ জুলাই আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তিন মাসের মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে না নিলে তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়ার পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার কথা বলা হয়।