শোলাকিয়ায় আটক শফিউল পুরোহিত হত্যার আসামি
পঞ্চগড় প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আটক শফিউল পঞ্চগড়ের পুরোহিত হত্যা মামলার আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৮ জুন পঞ্চগড়ের আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে ‘জেএমবি সদস্য হিসেবে’ এই শফিউলেরই নাম রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আইয়ুব আলী।
গত ৭ জুলাই ঈদের সকালে শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের আড়াইশ মিটারের মধ্যে এক পুলিশ চেকপোস্টে কয়েকজন হামলাকারী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় নিহত হন দুই পুলিশসহ চারজন। হামলার পরপর পুলিশের অভিযানে দিনাজপুরের মাদ্রাসা ছাত্র শফিউল ইসলাম ওরফে শরীফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল ওরফে সোহান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। তিনি র্যাব হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ বলছে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সন্ত গৌড়িয় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যার ঘটনাতেও জড়িত ছিলেন এই শফিউল।
পুরোহিত হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আইয়ুব আলী বলেন, ওই ঘটনায় প্রথমে তিন মোটরসাইকেল আরোহীসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। পরে কয়েকজন আসামির বক্তব্যে শফিউলসহ আরও কয়েকজন জেএমবি সদস্যের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়। আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে ১০ নম্বর আসামি হিসেবে শফিউলের নাম রয়েছে। অভিযোগপত্রে তার নাম মো. শফিউল আলম ওরফে ডন ওরফে সোহান (২০), বাবা আব্দুল হাই, ঠিকানাÑ দক্ষিণ দেবীপুর, ডাকঘর- হাটশ্যামগঞ্জ, থানা- ঘোড়াঘাট ও জেলা- দিনাজপুর।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, পুরোহিত হত্যার অভিযোগপত্রে শফিউলসহ ছয়জনকে পলাতক ও চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সক্রিয় সদস্য।
পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আমিনুর রহমান বলেন, আমলি আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে বিচারের জন্য মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়েছেন। কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকায় মামলার বিচার শুরু করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
ঘটনার দিন সকাল পৌনে ৭টায় আসামি নজরুল ওরফে হাসান, রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাঁধন ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন ওরফে সোহান মোটরসাইকেলে করে সন্ত গৌড়িয় মঠে আসে। নজরুল মোটরসাইকেলে বসে থাকে। রাজিবুল ও শফিউল মোটরসাইকেল থেকে নেমে মঠের ভিতরে যায়।
এদের মধ্যে রাজিবুল পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে চাপাতি দিয়ে কোপ মারে এবং দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে তাকে হত্যা করে। পরে রাজিবুল ও শফিউল দুজনেই পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ে এবং ককটেল ফাটিয়ে ওই মোটরসাইকেলে করে চলে যায়। পুরোহিত হত্যার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে করা অন্য মামলার অভিযোগপত্রেও শফিউলের নাম রয়েছে বলে পরিদর্শক আইয়ুব আলী জানান।
শোলাকিয়ায় শফিউলকে গ্রেফতারের পর র্যাাব-১৪ এর মেজর সাইফুল সাজ্জাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদ্রাসার ছাত্র শফিউল আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, কিন্তু শেষ না করেই ‘ওস্তাদের নির্দেশে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে’ কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। তার সঙ্গে কথা বললাম, তার মধ্যে কোনো ভয়ই নাই। সে বুলেটবিদ্ধ; তার মধ্যে কোনো যন্ত্রণা নেই। এর অর্থ হলো, তার মগজ ধোলাই করা হয়েছে এমনভাবে যে, এই কাজটাকেই সে মনে করেছে ইসলামের পথে জিহাদ, যদিও সত্যিকার অর্থে ইসলাম অ্যালাউ করে না, বলেন মেজর সাইফুল সাজ্জাদ। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা