এল আর বাদল : প্রথমবারের মতো ইউরো জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালো পর্তুগাল। ফাইনালে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর অতিরিক্ত সময়ে একমাত্র গোলে স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোপ সেরার মুকুট মাথায় পড়লো পর্তুগাল। শেষ পর্যন্ত মাঠে না থাকলেও স্বপ্নপূরণ হলো রোনালদোর। ফান্সের সাঁদেনিত স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন রোনালদো। সতীর্থরা হতাশ করেনি অধিনায়ককে। অতিরিক্ত সময়ে এদেরের চমৎকার গোলে স্বাগতিকদের হতাশ করে দশম দেশ হিসেবে ইউরোপসেরা হলো ফের্নান্দো সান্তোসের দল।
ইউরোর ফাইনালের রাতে রোনালদো দুইবার কাঁদলেন। একবার ২২তম মিনিটে, ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়ার সময়। আরেকবার এদেরের গোলে জয়ের আনন্দে। পুরো ম্যাচ না খেলে তিনিই চ্যাম্পিয়ন। দেশের হয়ে মেসি যা পারেননি, পর্তুগালের হয়ে তিনি তাই করলেন। দেশকে এনে দিলেন প্রথম বড় শিরোপা। তবে এটা সত্যি, রোনালদোহীন পর্তুগাল মন ভরানো ফুটবল না খেললেও ফ্রান্সকে পুরো সময় আগলে রেখেছে ফন্টে, কারভালহো, পেপেরা। অন্যদিকে জার্মানির বিপক্ষে ফ্রান্স যে একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিল পর্তুগালের বিরুদ্ধেও ছিল সেই একাদশ। ইউরোর ফাইনাল জিততে না পারলেও ম্যাচ কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করেছে তারাই। একাধিক গোলের সুযোগও পেয়েছিল তারা। কিন্তু পর্তুগীজ গোলরক্ষক বড়ই বেরসিক। অর্ধডজন গোলের সুযোগ তিনি একাই নস্যাৎ করেছেন। এর মধ্যে ফ্রান্সের পেপের একটি শট সাইড পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এ অবস্থায় স্বাগতিক ফ্রান্সকে হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।
নব্বই মিনিটের খেলায় ফ্রান্স গোলে শট নেয় ৭ বার। পক্ষান্তরে পর্তুগাল মাত্র একটি। বল দখলেও স্বাগতিকরা এগিয়ে ছিল, ৫৪ শতাংশ বনাম ৪৬ শতাংশ। ১০৪ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সকে আরেকবার রক্ষা করেন গোলরক্ষক। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন এদেরে। কোনোমতে তা ঠেকাতে সমর্থ হন হুগো। অতিরিক্ত সময়ের শেষ ১৫ মিনিটের শুরুতে বক্সের ঠিক সামনে ফ্রি-কিক পায় পর্তুগীজ। সেবার গোলপোস্টের কল্যাণে ফ্রান্স বেঁচে গেলেও পরের মিনিটে এদেরে পা থেকে বাঁচতে পারেনি স্বাগতিকরা। ফ্রান্সের রক্ষণভাগ তখন এলোমেলো। এদেরে বক্সের সামনে থেকে বল নিয়ে ভেতরে ঢোকেন। হঠাৎ ডান পায়ে মাটি কামড়ানো শট নেন। ডান দিকে অনেকটা ড্রাইভ দিয়েও বলের নাগাল পেতে ব্যর্থ হন ফ্রান্সের গোলরক্ষক। এদেরে যখন শট নেন, তখন সামনে ছিলেন স্যামুয়েল উমিতিতি। কী মনে করে যেন বলে যাননি। বরং শট নেওয়ার সময় চোখ বন্ধ করে লাফিয়ে উঠেন। ক্ষণিকের ভুলে গ্রিজম্যানদের স্বপ্ন ধূসর হয়ে যায়। ঠিক যেন জার্মানি-ফ্রান্স ম্যাচের প্রতিচ্ছবি। তুলনামূলক ভালো খেলেও হেরেছে ফ্রান্স। ইউরোর ইতিহাস কখনো বলবে না ২০১৬ সালের ফাইনালে ভালো খেলেছে ফ্রান্স। বলবে না, রোনালদো অল্প সময় মাঠে ছিলেন। ইতিহাস বলবে ২০১৬ ইউরো ফুটবলে পর্তুগাল নতুন চ্যাম্পিয়ন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম