মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলা
আজাদ হোসেন সুমন ও সুজন কৈরী : গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলাটি বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন এবং বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১ জুলাই রাতে ওই রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় জঙ্গিরা। পরে পুলিশ-র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়ে পরদিন সকালে ‘থান্ডার বোল্ট’ অপারেশনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় গত ৪ জুলাই পুলিশ বাদি হয়ে গুলশান থানায় মামলা করে।
এজাহারে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় যৌথ অভিযানে নিহত ৫ সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া নিহত অপর ব্যক্তি সাইফুল চৌকিদার ওই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হলেও ঘটনার সময় হামলাকারীদের সঙ্গে থেকে সহায়তা করে। প্রত্যক্ষ সাক্ষী জিম্মি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের দেখে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে নিহত সন্ত্রাসীদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাদের শনাক্ত করে তাদের অভিভাবক। তা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনার সময় বা তার পূর্বাপর সময়ে সন্ত্রাসীদের সহযোগীদের কেউ কেউ পালিয়ে যেতে পারে কিংবা উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের সন্ত্রাসীদের সহযোগীরা থাকতে পারে মর্মে ধারণা সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, উক্ত সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদি ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জিম্মি করে ঠা-া মাথায় ১৭ জন বিদেশি ও ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করে। এছাড়া দুজন পুলিশ অফিসারকে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যা করে এবং অনেক পুলিশ সদস্যসহ সাধারণ জনগণকে মারাত্মকভাবে জখম করে। এ কাজ করে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) ৬(২)৮ ধারায় অপরাধ করেছে এবং জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও এর সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থক তাদের এ কাজে অর্থ, অস্ত্র-গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি দিয়ে এবং প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা এবং প্ররোচনা করে ওই আইনের ৬(২)/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায় অপরাধ করেছে।
এ ঘটনায় আসামি মীর সামহ মোবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ, নির্বাস ইসলাম, মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল, মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ ও সাইফুল চৌকিদারসহ অজ্ঞাতনামা জেএমবি ও তার সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং এ কাজে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করে তদন্তের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জব্দ তালিকা :
তিনটি জব্দ তালিকায় রয়েছেÑ একটি সাদা কাপড়ের রুমাল, ৫টি বিদেশি ৯ এমএম পিস্তল, ৩টি একে-২২ মেশিনগান, ৭টি একে-২২ মেশিনগানের ম্যাগাজিন, ৬টি ৯ এমএম পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৯ রাউন্ড ৯ এমএম পিস্তলের গুলি, ৭ পয়েন্ট ৬৫ বোর পিস্তলের ২৮ রাউন্ড গুলি, ৩৫ রাউন্ড একে-২২ মেশিনগানের গুলি, পয়েন্ট ২২ বোর (একে-২২ মেশিন গান) ৪৪ রাউন্ড গুলি, ১২ রাউন্ড ৬১ী৬-এর তাজাগুলি/কার্তুজ, ২ রাউন্ড ৭ পয়েন্ট ৬২ বোরের গুলি বা কার্তুজ, ১০৫টি ৯ এমএম ক্যালিভারের কার্টিজ/গুলির খোসা, ১৯৫টি ৭ পয়েন্ট ৬২ ক্যালিবারের কার্টিজ, ৯টি গ্রেনেড সেফটি পিন, ৫টি নষ্ট গুলি, ৬টি পয়েন্ট ২২ বোর একে-২২ (মেশিনগান) কার্টিজ, ৩টি ছোট নাট যা স্পিøন্টার হিসেবে ব্যবহৃত, কমলা রঙ্গের রাবার দিয়ে মোড়ানো একটি ১৮ ইঞ্চি ছুড়ি, ৯ ইঞ্চি কালো প্লাস্টিকের বাটযুক্ত একটি চাকু, কাঠের বাটযুক্ত ১৩ ইঞ্চি একটি চাপাতি, দেড়ফুট লম্বা একটি ছোরা। এছাড়া জব্দ তালিকায় ১১টি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস, ২টি মোটরসাইকেল, ১১টি বাইসাইকেল, ২৫টি মোবাইল ফোনসেট রয়েছে।
এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বেশকটি পাসপোর্ট জব্দ করাসহ বিপুল ডলার, ইয়েন, ভারতীয় রুপি, নগদ টাকা, ভিসাকার্ড, মাস্টার কার্ড, ঘড়ি, ল্যাপটপ বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাভেল ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী