পাঁচ জঙ্গির নাম নিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাখ্যা
ডেস্ক রিপোর্ট : আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় পাঁচ জঙ্গি নিহত হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের এই নামগুলো প্রকাশ করা হয়। কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেরিয়ে আসতে থাকে জঙ্গিদের আসল নাম ও পরিচয়। এর সঙ্গে পুলিশের দেওয়া নামের মিল নেই। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে।
কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. ছানোয়ার হোসেন গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে তিনি ওই পাঁচটি নামকে জঙ্গিদের সাংগঠনিক ‘কোড’ নাম বলে উল্লেখ করেছেন। ছানোয়ারের ওই ফেসবুক পোস্টের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলোÑ
অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন উত্তরহীন রয়ে গেছে। পুলিশ এসব কাল্পনিক নামগুলো কোথায় পেল? পাঁচটি নামই ভুল প্রমাণের পরও পুলিশের কোনো বক্তব্য নেই কেন?
জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের সদস্যদের নামকরণের ক্ষেত্রে একটা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে থাকে। দলে ভেড়ানোর পর থেকে নতুন সদস্যের নাম ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে। আস্তানা পরিবর্তন, নতুন বাসাভাড়া, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রদান, অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ ও হস্তান্তর, দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনাসহ প্রভৃতি পরিবর্তনের সময়ে তাদের নতুন নতুন নাম দিয়ে থাকে তাদের ওপরের সারির নেতারা। একজন জঙ্গি সদস্য যতবার এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ততবার তার নতুন নাম দেওয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্র থেকে ১ জুলাইয়ের গুলশান ট্র্যাজেডির কয়েকজন আক্রমণকারীর নাম গোয়েন্দাদের কাছে চলে আসে ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, এত দ্রুত পুলিশ এ নাম কীভাবে পেল?
২০১৫ সালে সংঘটিত আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত জেএমবির এ খ-িত অংশটি দেশব্যাপী প্রায় তিন ডজন হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এ গ্রুপের শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ইউনিট। সবগুলো ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশ জানতে পেরেছে হামলাকারী ও নির্দেশদাতার নাম (ছদ্মনাম)। এসব ঘটনা তদন্ত করে পুলিশের কাছে জমেছে এক বিশাল তথ্যভা-ার ও তথ্য প্রাপ্তির অসংখ্য চ্যানেল।
সেই প্রেক্ষিতেই গুলশানের রেস্তোরাঁয় উল্লিখিত ছদ্মনামের কয়েকজন জঙ্গির (বিকাশ, আকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন) শারীরিক অস্তিত্বের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পায় পুলিশ। তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণে বোঝা যায়, সর্বশেষ আস্তানায় তারা এই নাম ধারণ করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিষয়টি পুলিশকে একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত করে এবং সূত্রগুলোর তথ্যের পারস্পরিক পার্থক্য খুব কম ছিল, যা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।
সাইট ইন্টেলিজেন্সও নিহত পাঁচ জঙ্গির ছবির পাশাপাশি পাঁচটি নাম প্রকাশ করেছে, সেগুলোও প্রকৃত নামের থেকে পৃথক ছিল। নামগুলো হলোÑ আবু উমর, আবু সালমা, আবু রহিম, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব। আর, পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত নামÑ বিকাশ, আকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। (সূত্র : সংবাদমাধ্যম)
পরে জনগণ ও পুলিশের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নামগুলোÑ নিবরাস ইসলাম (সাংগঠনিক ছদ্মনাম রিপন), মীর সামেহ মোবাশ্বের (আকাশ), রোহান ইবনে ইমতিয়াজ (বিকাশ), খাইরুল ইসলাম পায়েল (বাঁধন) ও শফিকুল ইসলাম (ডন)।
জঙ্গিবিরোধী কাজ শুধু নাম দিয়ে হয় না, নামগুলো কোড হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে নামের ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে হয়। এভাবেই কাজ হচ্ছে দেশে-বিদেশে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী